পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের হামলার বিস্তারিত উপগ্রহচিত্রে!
পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) বালাকোটে হামলায় জইশ-ই-মুহাম্মদসহ তিনটি জঙ্গি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে ভারত। ২১ মিনিটের ওই হামলায় মিরেজ ২০০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের বোমা জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আঘাত হানে ভারতীয় বিমানবাহিনী। তবে ওই হামলার কোনো ছবি এখনো প্রকাশ করেনি ভারত। আর তা নিয়ে দেশে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হামলার প্রশংসা করলেও কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী তথ্যও চেয়েছেন। তবে হামলার দিনে আসলে কী ঘটেছিল, তা জানা যেতে পারে উপগ্রহ চিত্র থেকে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে তিনটার দিকে সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছিল ভারতের বিমানবাহিনী। ১২টি মিরেজ ২০০০ (গ্লাইড) বিশেষ বোমা ফেলে ধ্বংস করেছে জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার ঘাঁটি। এই দিনের হামলার উপগ্রহ চিত্র ভারতের হাতে আছে।
দুটি আলাদা সূত্র থেকে এনডিটিভি জানতে পেরেছে, এই দিনের হামলার উপগ্রহ চিত্র ভারত সরকারের হাতে আছে। ওই উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন খাওয়া প্রদেশের বালাকোটে জইশ–ই–মুহাম্মদের ছয়টির মধ্যে পাঁচটি ঘাঁটিতে আঘাত হানতে পেরেছে বিমানবাহিনী। উপগ্রহ চিত্রগুলোকে একান্ত গোপনীয় তথ্য বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই মিরাজ বোমাগুলো কোনো বাড়িতে গিয়ে লাগলে সেটি ধ্বংস না–ও হতে পারে কিন্তু ভেতরে ঢুকে নিজের কাজ করে দেয়। এই গুণের জন্য অনেকে এ বোমাকে অদৃশ্য অস্ত্রও বলে থাকে। ওই পাঁচটি বাড়ির মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িতে ছোট ছিদ্র দেখা যাচ্ছে।
তবে অপর একটি সূত্র এনডিটিভিকে বলেছে, বালাকোটের আকাশে মেঘ জমে থাকায় ভারতীয় উপগ্রহ সুস্পষ্ট ছবি তুলতে পারেনি। ভারতের এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক সাইবার নিরাপত্তাকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, ভারতের দাবি সংশয়ের ওপরে নয়।
দুই দেশের সর্বশেষ সংকটের শুরু ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার ১২ দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ওই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের বড় ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেছে। নিহত হয়েছে ৩০০ জঙ্গি। জঙ্গি ঘাঁটিতে আকাশপথে মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। কিন্তু ওই হামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র একজনের আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি হামলাস্থল পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বালাকোটের বাসিন্দাদের। এরপরই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের লাশ কই। তবে ইতালির এক সাংবাদিক দাবি করেছেন, ভারতের আঘাত হানা জায়গা থেকে কয়েকটি দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার বালাকোটে বিমান হামলায় ‘জঙ্গি হত্যার’ তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ করবে না ভারত।
এদিকে সেই হামলার পরদিনই ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান। তার মধ্যে ছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। পরে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দেশের সৈন্য ঘাঁটিই ছিল পাকিস্তানের আক্রমণের লক্ষ্য। কিন্তু তা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
ভারতীয় যুদ্ধবিমানের একজন পাইলটকে আটকের দাবি করে তাঁর ভিডিও প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। যদিও কিছুক্ষণ পরেই সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়েছে। সেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ভারতের পক্ষ থেকে একজন পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান, আটক করে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। অবশ্য গত শুক্রবার ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা গেছে।