পাকিস্তানি মডেল হত্যায় ভাইয়ের যাবজ্জীবন

কান্দিল বেলুচ। ছবি: এএফপি
কান্দিল বেলুচ। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তারকা ও মডেল কান্দিল বেলুচকে হত্যার দায়ে তাঁর ভাই মুহাম্মদ ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০১৬ সালের জুলাইতে ‘অনার কিলিং’-এর শিকার হন ২৬ বছর বয়সী ওই তারকা। হত্যার তিন বছর পর এই রায় দিলেন আদালত।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

২০১৬ সালে সাংবাদিকদের সামনে বোনকে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করেন মুহাম্মদ ওয়াসিম। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। হত্যার কারণ হিসেবে ওয়াসিম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বোনের উপস্থিতি পরিবারের অসম্মান এনেছিল। পরিবারের সম্মান রক্ষা করতেই কান্দিল বেলুচকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

রায়ের পর ওয়াসিমের আইনজীবী সর্দার মেহবুব বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি।

রায়ে এই মামলার অন্য আসামি বেলুচের আরও দুই ভাইসহ ছয়জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোলামেলা ছবি ও কথাবার্তার জন্য একই সঙ্গে জনপ্রিয় ও নিন্দিত কান্দিল বেলুচকে মুলতানের ভাড়া বাড়িতে গত ১৬ জুলাই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর বাবার অভিযোগ, পারিবারিক সম্মান রক্ষার যুক্তি দিয়ে ওয়াসিমই কান্দিলকে হত্যা করেছেন।

বেলুচ ২০১৪ সালে একটি ভিডিও পোস্ট করে রাতারাতি পাকিস্তানে পরিচিতি পান। ওই ভিডিওতে তিনি ক্যামেরার দিকে ঠোঁট ফুলিয়ে বলছেন, ‘আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?’ ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। প্রথাবিরোধী ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি অনেকের প্রশংসা কুড়ান। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের তরুণ সমাজের কাছে।

২০১৬ সালের জুনে পাকিস্তানের এক ধর্মীয় নেতার সঙ্গে সেলফি তুলে তা পোস্ট করে বিতর্কের জন্ম দেন বেলুচ। দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয় এ নিয়ে তাঁকে তিরস্কার করে। এর আগে ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন বেলুচ। ভালোবাসা দিবস পালনকে ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি’ উল্লেখ করে দেশবাসীকে সতর্ক করে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্ট। বেলুচ টকটকে লাল রঙের একটি পোশাক পরে সাজগোজ করে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সমালোচনা করে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাঁর ওই ভিডিওতে ৭০ হাজার মানুষ ‘লাইক’ দেন।

বেলুচের মৃত্যুতে সে সময় পাকিস্তানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে। উদারপন্থীরা এ হত্যার বিচার দাবি করেন। তবে কিছু রক্ষণশীল নারী-পুরুষ বেলুচের সমালোচনাও করেন।