নারীদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্যের পর ক্ষমা চাইলেন তিনি
ইয়োশিরো মোরি জাপানের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। ৮১ বছর বয়সী দেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর দেশের ক্রীড়াজগতের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। তিনি জাপান রাগবি ফুটবল কমিটির প্রধান। ২০২০ সালের অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্বাগতিক শহর হিসেবে টোকিও মনোনীত হওয়ার পর সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির সভাপতির পদও একই সঙ্গে গ্রহণ করেছেন তিনি। তবে সাত বছর ধরে সেই পদে আসীন থাকা অবস্থায় অলিম্পিক বাস্তবায়িত হওয়া এখন যেন ক্রমেই দূরে সরে যেতে শুরু করেছে। ফলে একধরনের হতাশা হয়তো পেয়ে বসে থাকবে এবং সম্ভবত এ কারণেই সময়ে–অসময়ে মুখ ফসকে বের হয়ে যাওয়া কিছু মন্তব্যের কারণে বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে।
ইয়োশিরো মোরি সর্বশেষ এ রকম একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত জাপান অলিম্পিক কমিটি পরিষদের বৈঠকে, যেটা নিয়ে এখন জাপানে যথেষ্ট হইচই শুরু হয়েছে। মোরির সেই মন্তব্যকে ‘নারীবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন। বৈঠকে মোরি বলেন, নির্বাহী বোর্ডের কোনো বৈঠকে নারীর উপস্থিতি বেশি হলে বৈঠক অযথা দীর্ঘায়িত হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈঠককে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ প্রলম্বিত করতে হয়। কী কারণে এ রকম হয়ে থাকে, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, মেয়েদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রবণতা অনেক বেশি। ফলে বৈঠকে হাত তুলে একজন কিছু বলতে চাইলে অন্য নারী সদস্যরাও একের পর এক হাত তুলে বিতর্কে অংশ নিতে শুরু করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি জাপানের সংবাদমাধ্যম বিষয়টিকে তুলে নিলে অনেকটা জাতীয় পর্যায়ের বিতর্কের একটি বিষয় হয়ে ওঠে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে সমালোচনা বিস্তৃত হতে থাকলে আজ এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন মোরি। তিনি স্বীকার করেন, তাঁর মন্তব্য অলিম্পিকের চেতনাবিরোধী। কেউ এতে মর্মাহত হলে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। তবে একই সঙ্গে বলেছেন, অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই।
টোকিও অলিম্পিকের আয়োজন ঘিরে দেখা দেওয়া সন্দেহ এখন ক্রমশ আরও বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি জাপান সময়মতো টিকাদান শেষ করতে পারবে বলে অনেকেই মনে করছেন না। ফলে দেশের জনমতও এখন ক্রমশই অনেক বেশি অলিম্পিক আয়োজনের বিরোধিতার দিকে যাচ্ছে।
তবে বিশাল অর্থব্যয়ের সবটা গচ্চা যাওয়া এবং সেই সঙ্গে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে সরকার চাইছে, অলিম্পিক যেন যেকোনো উপায়ে এ বছর টোকিওতেই অনুষ্ঠিত হয়। এমনকি দর্শকবিহীন অলিম্পিকের আয়োজন করতে হলেও সরকার এখন তাতে রাজি আছে। যদিও এত দিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, দর্শকের উপস্থিতিতেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। সরকারের এতটা একগুঁয়েমি মনোভাবের পেছনে আয়-ব্যয়ের হিসাবের বাইরেও আছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার প্রতি জনসমর্থন এখন পতনমুখী। অক্টোবর মাসের মধ্যে নতুন একটি নির্বাচন ডাকতে হবে সরকারকে। ফলে সরকারের ভেতর–মহলের অনেকেই মনে করছেন, অলিম্পিক ভন্ডুল হয়ে যাওয়া নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়াকে অনেক বেশি কঠিন করে তুলতে পারে। আর তাই দর্শকের উপস্থিতি থাক বা না থাক, কোনো একভাবে অলিম্পিকের আয়োজন শেষ করতে পারলে নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে তাদের বিশ্বাস।