‘নামমাত্র’ বিয়েতে ঝুঁকছে সৌদি সমাজ, বাদ যাচ্ছেন না প্রবাসীরাও
সৌদি সমাজে শর্তহীন বা নামমাত্র বিয়ে ‘মিসইয়ার’-এর ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। প্রচলিত বিয়ের খরচ মেটানোর সামর্থ্য না থাকা ব্যক্তিদের জন্য গোপনে এ ধরনের বিয়ে যেন ‘আশীর্বাদ’ হয়ে উঠছে। তবে ইসলামি চিন্তাবিদেরা এ বিয়েকে ‘উচ্ছৃঙ্খলতাকেই বৈধতা দানের’ চেষ্টা বলে সমালোচনা করছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, বিধিসম্মত বিয়ের বাইরে শারীরিক সম্পর্ক ইসলামে নিষিদ্ধ। এএফপির খবর।
সৌদি আরবে কয়েক দশক ধরেই অস্থায়ী বিয়ের প্রচলিত একটি ব্যবস্থা আইনি বৈধতা পেয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সহাবস্থান এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের খরচ বহন করার মতো কিছু অধিকার থেকে স্বামীকে অব্যাহতি দিয়ে থাকেন স্ত্রী। তবে মিসইয়ার বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যেন কোনোরকম শর্ত বা দায়বদ্ধতাই নেই। যা আছে, তা হলো গোপনীয়তা ও লজ্জা।
শর্তহীন এসব বিয়ে বেশি দিন টেকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গড়পড়তা ১৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে।
ঘটকালিতে যুক্ত ব্যক্তি, মিসইয়ার দম্পতি ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সাক্ষাৎকার থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁদের কথায় জানা যায়, মিসইয়ার প্রকৃতপক্ষে বৈবাহিক সম্পর্ক ও একাকী জীবনের একটা মিশ্রণ। যেখানে বহুগামী নারী-পুরুষ দ্বিতীয় সংসার বয়ে বেড়ানোর চাপ এড়িয়ে বৈবাহিক সম্পর্কের সুবিধা উপভোগ করে থাকেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন বিয়েতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি আছে। তারপরও কিছু নারীর কাছে এই পদ্ধতি পুরুষতান্ত্রিক প্রচলিত বিবাহব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায়। আবার অবিবাহিত দম্পতিরা একে নিজেদের যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে একধরনের বৈধতার আবরণ হিসেবে বিবেচনা করেন। যদিও ইসলামে বিবাহবহির্ভূত যেকোনো শারীরিক সম্পর্কই নিষিদ্ধ।
ওই ব্যবস্থা সম্পর্কে ৪০-এর কোঠার বয়সী এক সৌদি সরকারি কর্মীর দাবি, ‘মিসইয়ার বৈধ পন্থায় আরাম, স্বাধীনতা ও সাহচর্যের মাধ্যম।’ তিরিশোর্ধ্ব বয়সী এক নারীর সঙ্গে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এমন সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন।
মিসইয়ার সস্তা। এ বিয়েতে অর্থের দেনাপাওনা নেই, নেই কোনো দায়বদ্ধতাও।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই ব্যক্তি বলেন, প্রচলিত পন্থায় তিনি একটি বিয়ে করেছেন। সেই ঘরে তিনটি সন্তান। রিয়াদের বাড়িতে তাঁর এক মিসইয়ার স্ত্রী রয়েছেন। তাঁর কাছে যখন ইচ্ছা তিনি যান। এই গোপন সংসার থেকে কোনো অর্জন বা প্রাপ্তি আছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, তাঁর এক বন্ধুর এক ডজনের মতো মিসইয়ার স্ত্রী রয়েছে। তিনি একজনকে তালাক দেন, অন্যজনকে বিয়ে করেন। একজনকে তালাক দেন, অন্যজনকে বিয়ে করেন...।
স্থানীয় নাগরিকদের মতো সৌদি আরবে বসবাসকারী প্রবাসী কর্মীরাও এ ধরনের বিয়েতে ঝুঁকছেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। নিজেদের পার্টনার খুঁজতে অনলাইনে বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ ও বিয়ের ঘটকালিতে নিয়োজিত ওয়েবসাইটের শরণাপন্ন হচ্ছেন তাঁরা। রিয়াদে কর্মরত মিসরের একজন ফার্মাসিস্ট (৪০) এএফপিকে বলেন, ‘মিসইয়ার সস্তা। এ বিয়েতে অর্থের দেনাপাওনা নেই, নেই কোনো দায়বদ্ধতাও।’
ইসলামি চিন্তাবিদেরা এ বিয়েকে ‘উচ্ছৃঙ্খলতাকেই বৈধতা দানের’ চেষ্টা বলে সমালোচনা করছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, বিধিসম্মত বিয়ের বাইরে শারীরিক সম্পর্ক ইসলামে নিষিদ্ধ।
মিসরের এই কর্মী আরও বলেন, গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে তিনি স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী সন্তানকে দেশে পাঠিয়ে দেন। পরে মিসইয়ার স্ত্রীর খোঁজ শুরু করেন। ইনস্টাগ্রামে এক ঘটকালি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ৫ হাজার রিয়াল (১ হাজার ৩৩৩ ডলার) ফি দাবি করে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার ওজন, উচ্চতা, গায়ের রং...জানাই। তবে এখনো মিসইয়ার স্ত্রীর সন্ধান পাইনি।’
সৌদি বিচার মন্ত্রণালয়ের কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির আল-ওয়াতান সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, শর্তহীন এসব বিয়ে বেশি দিন টেকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গড়পড়তা ১৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে।
রিয়াদে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটা একজন সিরীয় নারীর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী বলেন, ওই নারী গোপনে মিসইয়ার বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন। তিনি এ বিয়ের কথা গোপন রেখেছেন। কারণ, তাঁর আশঙ্কা, আগের স্বামী খবরটি জানলে আইনগতভাবে তাঁর দুই সন্তানকে নিজ হেফাজতে রাখার চেষ্টা চালাবেন তিনি।