তাইওয়ানের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

তাইওয়ানে স্বাধীনতাকামী ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) দেশটির মেয়র ও স্থানীয় নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলটির পরাজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে চীন। এই ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা নয়, ‘এক চীন’ নীতির পক্ষে তাইওয়ানের ভোটাররা মত প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করেছে চীন।


বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় নির্বাচনে দলের বড় ধরনের এই পরাজয়ের দায়ভার নিয়ে গতকাল ডিপিপির চেয়ারওমেন হিসেবে পদত্যাগ করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। তবে এটি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন হওয়ায় তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল রয়েছেন। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে তাঁকে পুনর্নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

তাইওয়ানের মাত্র ছয়টি শহর ও কাউন্টিতে ডিপিপির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অন্যদিকে, কমপক্ষে ১৫টিতে জয় পেয়েছে চীনপন্থী ন্যাশনালিস্ট কুওমিনতাং পার্টি (কেএমটি)। ডিপিপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত কোজিংয়ে হেরেছে দলটি।

নির্বাচনের পর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তাইওয়ানবিষয়ক চীনের নীতি প্রণয়ন কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই ফলাফলে তাইওয়ানের জনগণের জোরালো প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ চায়, দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন সম্পর্কের মাধ্যমে কল্যাণপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। তারা দ্বীপের অর্থনীতির উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণ চায়।

২০১৬ সালে সাই ক্ষমতা নেওয়ার পর তাইওয়ানের ওপর চীন নানাভাবে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। চীন থেকে বেরিয়ে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা চান সাই। তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ দাবি করা চীনের জন্য এটা সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি চীন দ্বীপজুড়ে সামরিক মহড়া শুরু করলে এবং তাইওয়ানের কূটনৈতিক মিত্রদের একে একে কেড়ে নিলে তাইওয়ানজুড়ে উত্তেজনা শুরু হয়।

এই নির্বাচনে সাই ও তাঁর সরকার অভিযোগ করেছে, তাদের দলকে পরাজিত করার জন্য চীন ‘রাজনৈতিক তর্জন–গর্জন’ ও ‘ভুয়া খবর’–এর মাধ্যমে ভোটারদের দোদুল্যমান করার চেষ্টা করেছে। তবে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তাইওয়ানের বিরোধী দল ন্যাশনালিস্ট কুওমিনতাং পার্টির (কেএমটি) মেয়র প্রার্থী তিং সোও-চাং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের পর নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করে মামলা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
তাইওয়ানের বিরোধী দল ন্যাশনালিস্ট কুওমিনতাং পার্টির (কেএমটি) মেয়র প্রার্থী তিং সোও-চাং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের পর নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করে মামলা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

ডিপিপির সেক্রেটারি জেনারেল হুয়াং ইয়ো-ফু গতকাল অভিযোগ করেছেন, বারবার ‘ভুয়া খবর’ ছড়িয়ে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে কাজ করেছে চীন। তিনি আরও বলেন, এ থেকে গভীর শিক্ষা হয়েছে। ভুয়া খবর অনেক মানুষের চিন্তাভাবনাকে এলোমেলো করে দেয়। এ ধরনের খবরের কারণে লোকজন স্পষ্ট কোনো তথ্য পান না। শুধু তাইওয়ানে নয়, বিশ্বব্যাপী এ সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে তাঁদের দল উপায় খুঁজে পাবে বলে মনে করেন হুয়াং ইয়ো-ফু।

তবে নির্বাচনী নাটক এখনো শেষ হয়নি। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেতে বিরোধী দল কুওমিনতাংয়ের মেয়র প্রার্থী তাঁর পরাজয়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিং সোও-চাং আজ রোববার বলেছেন, তিনি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কো ওয়েন-জে খুব অল্প ব্যবধানে জিতেছেন। সেখানে ডিপিপি প্রার্থী তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় টোকিও অলিম্পিকে ‘চায়নিজ তাইপে’–র পরিবর্তে তাইওয়ান নামে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে গণভোট হয়। ১৯৮১ সালে এক সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘চায়নিজ তাইপে’ নামের ব্যাপারে সম্মতি হয়। তবে এই গণভোটে খুব বেশিসংখ্যক ভোটার সাড়া দেননি। বেশির ভাগ নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এটিকেও বিজয় হিসেবে দেখছে চীন।

এ ব্যাপারে চীনের তাইয়ানবিষয়ক কার্যালয় বলেছে, এতেই বোঝা যায়, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘তাইওয়ানিজ অ্যাথলেট’ নাম বসানো হচ্ছিল। ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ চাওয়ার উদ্যোগ ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।