ট্রাম্প-কিমের বৈঠকে কী হলো?
মঙ্গলবারের সকালটা কি বিশ্ববাসীর জন্য সুখবর বয়ে আনবে? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের বৈঠকের দিকে চেয়ে আছে বিশ্ববাসী। পরস্পরের হুমকি-ধমকির অবস্থান শেষে সরে এসে ঐতিহাসিক এক করমর্দন করেছেন তাঁরা। সিঙ্গাপুরের এক বিলাসবহুল হোটেলে আজ মঙ্গলবার সকালে শেষ হয়েছে দুজনের একান্ত বৈঠক। সে বৈঠক শেষে দুজনকে হাসিমুখেই বের হতে দেখা গেছে। এটাকে ইতিবাচক সূচনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ সকাল ১০টার কিছু আগে দুই নেতা সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপের ক্যাপেলা হোটেলের লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং বারান্দায় হাসিমুখে হাঁটতে থাকেন। সেখানকার উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়েন তাঁরা।
বৈঠক কেমন হলো—ট্রাম্পকে এ প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিয়েছেন, ‘খুব, খুবই ভালো’ এবং বারবার বলেছেন, ‘তাঁদের দুজনের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক তৈরি হতে পারে।’
বৈঠক শুরুর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, বৈঠক শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই এর গতিপ্রকৃতি বোঝা যাবে।
অন্যদিকে কিম বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক তিনি, তবে তাতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম-জং উনের একান্ত বৈঠক শেষে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আজ দিনের শুরুটা দুই নেতার ঐতিহাসিক করমর্দনের মধ্যে শুরু হয়।
স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩ মিনিটে ট্রাম্প ও কিম ক্যাপেলা হোটেলের আঙিনায় আলাদা দুই দিক থেকে বের হয়ে আসেন এবং মুখোমুখি হন। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার পতাকা পেছনে রেখে দুজন প্রথমবারের মতো ১২ সেকেন্ড করমর্দন করেন।
বৈঠক শুরুর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, দারুণ এক আলোচনার আশা করছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার দারুণ লাগছে। দারুণ আলোচনা হবে এবং আমরা সফল হল। আমাদের দারুণ সম্পর্ক হতে পারে। এটা আমার জন্য সম্মানের। আমার এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
দোভাষীর মাধ্যমে কিম বলেছেন, ‘যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ বৈঠক হচ্ছে, তা সহজ ছিল না। অতীতের সব কুসংস্কার আর অভ্যাস আমাদের সামনে এগোনোর পথে বাধা হয়ে ছিল। আমরা সেগুলো পেছনে ফেলে আজ এখানে এসেছি।’
প্রায় ৪৫ মিনিট দুজন একান্ত বৈঠক করেন। এ সময় দুজনের পক্ষে অনুবাদক ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। এরপর তাঁরা দুজন পৃথক ঘরে চলে যান।
এরপর সকাল ১০টা থেকে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়েছে।
দুই দেশের অতিথিরা যে টেবিলে আলোচনায় বসেছেন, সেটি ৮০ বছরের পুরোনো এবং ৪ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ সেগুন কাঠের টেবিল। এটি আগে সিঙ্গাপুরের প্রধান বিচারপতি ব্যবহার করতেন।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, চিফ অব স্টাফ জন কেলি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন উপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সারাহ স্যান্ডার্স, ফিলিপাইনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুং কিম, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এশিয়া অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ম্যাট পটিংগার এতে যোগ দিচ্ছেন।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ওং হো, কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান রি সু ওং উপস্থিত রয়েছেন। তবে গত এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া কিমের বোন কিম ওহ জংকে বৈঠকে দেখা যায়নি।
এর আগে উত্তর কোরিয়ার মিস চই ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম গতকাল সোমবার রিটজ-কার্লটন মিলেনিয়া সিঙ্গাপুর হোটেলে বৈঠকের বিস্তারিত ঠিক করেন।
এ বৈঠকে দুই শীর্ষ নেতা নমনীয় মনোভাব দেখাবেন বলেই আশা করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
অবশ্য দুই দেশের এ বৈঠকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি থেকে পিয়ংইয়ং সরে আসবে কি না, তার কোনো জবাব দেননি কিম।
অবশ্য ট্রাম্প আশা করছেন, কিমের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পার্থক্য দূর করতে পারবেন।
দুজনের এ বৈঠকে ট্রাম্প ‘প্রথম প্রেমের সাক্ষাতের’ সঙ্গে তুলনা করছেন। তাঁর মতে, এটি শান্তিপ্রক্রিয়ার জন্য প্রথম আলোচনা। সম্পর্কের সূচনা করতে কমপক্ষে আলোচনার টেবিল পর্যন্ত আসা গেছে এটাকেই বড় করে দেখছেন ট্রাম্প।
১৯ জুন জি-৭ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে গত রোববার কানাডায় তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন। জি-৭ সম্মেলনের পর আজকের সম্মেলন সফল করার বিষয়ে বেশ চাপে ছিলেন তিনি।
আশা করা যাচ্ছে, ট্রাম্প ও কিম পরস্পরকে তাঁদের দেশে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
গতকাল সোমবার উত্তর কোরিয়ার সরকারি গণমাধ্যমে বলা হয়, কোরিয়া উপদ্বীপে তাদের নেতা স্থায়ী ও টেকসই শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করবেন। যুগের পরিবর্তনে এটা জরুরি। এ ছাড়া পিয়ংইয়ং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়তে চায়।
আজকের হাসিমুখের বৈঠকের আগের প্রেক্ষাপট কিন্তু খুব ভালো ছিল না। দুই নেতা পরস্পরকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। পিয়ংইয়ং কয়েক দফা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়।
আজকের বৈঠক ঘিরে অনেক সংশয় ছিল। গত ২৪ মে হঠাৎ করে বৈঠক বাতিল করেন ট্রাম্প। পরে দুই পক্ষের কর্মকর্তারা আলোচনা করে আবার দুই নেতাকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়েছেন।
বৈঠক ঘিরে অভূতপূর্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সিঙ্গাপুর। ১০ জুন দুই নেতা দেশটিতে পৌঁছানোর পর তাঁদের হোটেলের দিকের প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রায় পাঁচ হাজার হোম টিম অফিসারকে নিরাপত্তার কাজে লাগিয়েছে দেশটি। এ বৈঠক আয়োজন করতে দুই কোটি মার্কিন ডলার খরচ করছে সিঙ্গাপুর। এর মধ্যে হোটেলের বিলও রয়েছে।
বৈঠক আয়োজন করার জন্য সিঙ্গাপুরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কিম ও ট্রাম্প। আজই বৈঠক শেষে দুই নেতা সিঙ্গাপুর ছাড়বেন।
অারও পড়ুন :-