জাপানে গরমেও কমছে না করোনা
জাপানে এ বছর কিছুটা দেরিতে গরমকাল শুরু হয়েছে। টোকিওর পার্শ্ববর্তী দুটি জেলা সাইতামা ও গুন্মার কয়েকটি শহরে আজ দিনের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। টোকিওতে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে। গরমে মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হলেও মানুষকে বাধ্য হয়েই তা করতে হচ্ছে।
কিছুদিন আগেও বলা হচ্ছিল, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনার সংক্রমণ কমে আসবে। তবে করোনাভাইরাস সেসব হিসাব ওলট–পালট করে দিয়েছে। গরমের সময়ও গতকাল সোমবার জাপানে করোনার সংক্রমণে শনাক্তের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। মাত্র এক সপ্তাহে নতুন শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। জাপান কোন পথে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই।
টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার বন উৎসবের ছুটির সময় ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে যাওয়া এবং বিনোদনের জায়গায় জড়ো না হওয়ার উপদেশ দিয়েছে। টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকে বলছেন, প্রয়োজন হলে জাপানের রাজধানী এককভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবে। সে রকম পদক্ষেপ যেন না নিতে হয়, এ জন্য রাজধানীবাসীর সহযোগিতা তিনি প্রত্যাশা করছেন।
জাপানে এখন করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী। কিছুদিন আগে পর্যন্ত টোকিও, ওসাকা ও অন্য বড় নগর কেন্দ্রগুলোয় সংক্রমণ কেন্দ্রীভূত থাকলেও গত এক সপ্তাহে ছোট অনেক শহর ও জনপদেও ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
জাপান সরকার অবশ্য বলছে, সংক্রমণ নতুনভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলেও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো দেখা দেয়নি। কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার কমে আসার বিষয় উল্লেখ করা হয়। ভাইরাসে সংক্রমিত অনেকেই চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছেন। তবে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার উপদেশ দিচ্ছে। মধ্য আগস্টে বন উৎসবের সময় চলে আসার মুখে নিজেদের পূর্বপুরুষের ভিটামাটি সফরের পরিকল্পনা চলতি বছরের জন্য স্থগিত রাখার আহ্বানও নাগরিকদের প্রতি জানানো হচ্ছে।
বন উৎসবের সময়ে জাপানিদের বড় এক অংশ নিজেদের আদি বাসভূমিতে ফিরে যায়। অনেকে অন্য দেশে বা বিদেশ ভ্রমণে যায়। জাপানিদের মধ্যে এ রকম ধারণা প্রচলিত আছে যে বন উৎসবের সময় পূর্বপুরুষের আত্মা ফিরে আসে। ফিরে আসা আত্মা যেন তৃপ্তির বোধ নিয়ে আবারও যেখান থেকে আসে সেখানে ফিরে যেতে পারে, এ জন্য আদি পুরুষদের সমাধিতে গিয়ে সেগুলো পরিষ্কার রাখা এবং বাড়ি ফিরে গিয়ে প্রার্থনা করাকে জাপানের লোকজন বছরের বিশেষ এক দায়িত্ব বলে মনে করে থাকেন।
বন উৎসব ঘিরে পর্যটন, হোটেল, পরিবহন ও সেবা খাতের ব্যবসা জমে ওঠে। এ কারণে এই সময়কে অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এ বছর করোনার কারণে ব্যবসার হিসাব-নিকাশও উল্টে গেছে। রেল ও উড়োজাহাজেও ভিড়ে নেই। দূরের পথের সড়কযাত্রাতেও তেমন যানজট নেই।
টোকিওতে আজ ১৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা গত কয়েক দিনের তুলনায় কম। তবে স্বস্তি এনে দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।