গৃহযুদ্ধের মুখে আফগানরা

দুই দশক ধরে চলা আফগান যুদ্ধের ইতি টানছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করেছেন বিদেশি সেনারা।ফাইল ছবি: এএফপি

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পুরোপুরি গুটিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে দেশটিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ফলে আফগানরা এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। তালেবানের হামলা বেড়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, দেশটি আরেকটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আফগানিস্তানে নিরাপত্তা–সংকট আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। মার্কিন বাহিনী বাগরাম ঘাঁটি থেকে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা হতো। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অনেকটা চুপিসারে ঘাঁটি ছাড়ে মার্কিন সেনারা। ফলে আফগানিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অরক্ষিত হয়েছে পড়েছে। এটা আফগান সরকারের ক্ষমতার খুঁটি নড়বড়ে করে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র যখন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ইতি টেনে সব সেনাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে, ঠিক তখনই সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে আফগানিস্তানজুড়ে। যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তালেবান যোদ্ধারা পুরোপুরি সামরিক বিজয়ের দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিকে হটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এ যোদ্ধারা কিছুদিন ধরেই কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নতুন করে বেশ কিছু জেলাও দখলের দাবি করেছে তালেবান। তবে দেশটির প্রধান প্রধান শহর এখনো আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর দখলে।

আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক বারি আরেজ বলেন, এখন লড়াই বাড়বে। আফগান বাহিনীকে কঠিন সময় পার করতে হবে।

আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস হয়েছে। এতে বলা হয়, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ছয় মাসের মধ্যে তালেবান কাবুল দখল করে নিতে পারে।

আফগান সরকারি বাহিনী এবং তালেবান—উভয় পক্ষই প্রায়ই দাবি করে যে লড়াইয়ে তারা শত্রুপক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তবে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে তাদের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষিত আফগানরা এখন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

তবে পরিস্থিতি দেখে আঁচ করা যাচ্ছে যে আফগানিস্তান সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। আফগান সরকারের পক্ষে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রধান ভূমিকা পালন করত। তালেবানের হামলার ঝুঁকিতে থাকা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিত মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো। এখন সেই সামরিক সুবিধা আর পাচ্ছে না আফগান বাহিনী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দেশটির সরকার বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি তালেবানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই পদক্ষেপ সংঘাতের আগুনে ঘি ঢেলে দিতে পারে। নাম না প্রকাশ করা শর্তে একজন বিদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেছেন, এই কৌশল হতে হবে সুদক্ষ নেতৃত্বে, সুসংগঠিত উপায়ে এবং সুনিয়ন্ত্রিতভাবে। এটা না হলে বিষয়টি বুমেরাং হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য বলেই মনে হচ্ছে। ক্ষমতা দখলে সেখানে এখন একে অন্যের বিরুদ্ধে জোর লড়াইয়ে জড়িয়ে যাবে।