ক্ষোভে ফুঁসছে শ্রীলঙ্কানরা, নিহত ৭

ছবি: রয়টার্স

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বিক্ষোভে ফুঁসছে শ্রীলঙ্কান জনতা। খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও জ্বালানির অভাব দেশজুড়ে। এমন পরিস্থিতি সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। এদিকে শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকার–সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে সাত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের এক সংসদ সদস্যও আছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে ১৯০ বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে আজ মঙ্গলবার গণবিক্ষোভের মুখে মাহিন্দা রাজাপক্ষকে সরকারি বাসভবন ছাড়তে হয়েছে সেনা পাহারায়। এর আগে হাজারো বিক্ষোভকারী বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা রাজধানীর ‘টেম্পল ট্রিজ’ বাসভবনের মূল দোতলা ভবনে হামলার চেষ্টা করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আটকা পড়েন।

ছবি: রয়টার্স

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। সরকার–সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর শ্রীলঙ্কায় বিক্ষুব্ধ জনতা দেশটির পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও এমপিদের বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালানোর পর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল সোমবার মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগের পর সহিংসতা শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলমান সহিংসতায় এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে চলমান কারফিউ কাল বুধবার সকাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ বলছে, আজ সকাল থেকে দেশটির কলম্বোর সড়কে নেই বিক্ষোভকারীরা। অনেকেটাই শান্ত পরিস্তিতি বিরাজ করছে। শ্রীলঙ্কান পুলিশের মুখপাত্র নিহাল থালডুয়া রয়টার্সের কাছে দাবি করেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত। এখনো বিক্ষিপ্তভাবে কিছু অস্থিরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।’

সেনা পাহারায় মঙ্গলবার কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছাড়েন মাহিন্দা রাজাপক্ষে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বিক্ষোভের লাগাম টানতে এরপর জারি করা হয় কারফিউ। গতকাল প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাড়ান মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এরপরও ক্ষোভ কমেনি মানুষের। চলেছে বিক্ষোভ মিছিল। বন্দর শহর হামবানটোটায় প্রভাবশালী রাজাপক্ষেদের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। দেশটির শাসক দল ‘শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার নেতা তথা সাবেকমন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকওয়েলার ক্যান্ডির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

হামলা হয়েছে শাসক দলের কয়েক এমপির বাড়িতে। গতকাল নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর পরিবারের সমর্থকদের হামলায় উসকানি দেওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করেন বিক্ষোভকারী ও দেশটির ধর্মীয় নেতারা। এর জেরেই মূলত পাল্টা হামলা শুরু হয়।

আরও পড়ুন

করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।

অচলাবস্থা নিরসনে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপক্ষকে পদত্যাগ করতে বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া সম্পর্কে মাহিন্দা রাজাপক্ষের ছোট ভাই। এক যুগ আগে শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতাকামী তামিল টাইগারদের দমন করে দেশটিতে রাজাপক্ষে পরিবারের আধিপত্য তৈরি করেছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। রাজাপক্ষেদের উত্থান শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করেছিল। কিন্তু আর্থিক সংকট শ্রীলঙ্কাবাসীকে রাজাপক্ষেদের বিরুদ্ধে পথে নামিয়ে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারে শুধু তাঁর নিজের পরিবারের সাত সদস্য ছিলেন। গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা
ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার এ সংকটের জন্য অনেকে চীনের দিকে আঙুল তুলেছে। চীনের ঋণের জালে বন্দী হয়ছে শ্রীলঙ্কা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু চীনা ঋণ নয়, শ্রীলঙ্কার দুর্দশার জন্য দায়ী রাজপক্ষে পরিবারের অপশাসন, করোনা মহামারির মতো ইস্যুগুলোও। তথ্যসূত্র: এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি

আরও পড়ুন