কোয়াড সম্মেলনে গুরুত্ব পায়নি ইউক্রেন ও তাইওয়ান প্রসঙ্গ

কোয়াড সম্মেলনে ফটোসেশনে অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ (বা থেকে প্রথম), যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টোকিও, জাপান, ২৪ মে
ছবি: রয়টার্স

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা জোট কোয়াডের সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রসঙ্গ টেনে আলোচনা শুরু করলেও বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেন প্রসঙ্গ তেমন গুরুত্ব পায়নি। গুরুত্ব পায়নি তাইওয়ান প্রসঙ্গও।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আগের দুটি শীর্ষ বৈঠক অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার জাপানের টোকিওতে কোয়াডের এক দিনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। সম্মেলন শেষে বিবৃতিতে দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতির কথা বলা হলেও চীনের নাম সরাসরি উচ্চারিত হয়নি। তবে চীন সাগরের পরিস্থিতি একতরফাভাবে বদলে ফেলার যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিবৃতিতে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা প্রসঙ্গটিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ।

এবারের সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ জাপান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অস্ট্রেলিয়ার সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ উপস্থিত ছিলেন।

কোয়াড বৈঠকের ফলাফল ও গুরুত্ব নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। মন্ত্রণালয়ের প্রেস সচিব হিকারিকো ওনো বলেন, বৈঠকে অবাধ ও মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। একই সঙ্গে নেতারা স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবধর্মী সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

জাপানের রাজধানী টোকিওতে কোয়াড সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ তিন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তাঁদের গাড়িবহরকে শুভেচ্ছা জানাতে ফুটপাতে অপেক্ষারত জাপানিরা। টোকিও, জাপান, ২৪ মে
ছবি: রয়টার্স

বৈঠকের শুরুতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো হামলা জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যেন একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইউক্রেন প্রসঙ্গ টেনেছেন। তবে রাশিয়ার আগ্রাসন ও চীনের তৎপরতা নিয়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান স্বত্বেও কোয়াডের যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও তাইওয়ান প্রণালির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। একটি মাত্র বাক্যে ইউক্রেনের প্রসঙ্গ এসেছে। সেটি হলো, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এখনো বিশ্বজুড়ে মানবিক ও অর্থনৈতিক বেদনা নিয়ে আসা অব্যাহত থাকা, বিভিন্ন রাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইউক্রেনে চলতে থাকা মর্মান্তিক সংঘাত স্বত্বেও আমরা অবিচল অবস্থান বজায় রেখে চলেছি।’

এর বাইরে বিবৃতির শান্তি ও স্থিতিশীলতা অংশেও ইউক্রেন কিংবা রাশিয়ার নাম সরাসরি উল্লেখ নেই। অনেক বিশ্লেষকই এটাকে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের ফলাফল হিসাবে দেখছেন। যদিও শীর্ষ বৈঠক শুরুর আগে মনে করা হচ্ছিল, চাপের মুখে ভারত হয়তো আগের অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হবে।

সম্মেলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। টোকিও, জাপান, ২৪ মে
ছবি: রয়টার্স

যৌথ বিবৃতির শান্তি ও স্থিতিশীলতা অংশে দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে চালানো একতরফা তৎপরতা মোকাবিলায় জাতিসংঘের সমুদ্র আইন মেনে চলার বিষয় তুলে ধরা হয়। দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরসহ অঞ্চলের অন্যান্য সমুদ্র সীমায় নৌ চলাচলে স্বাধীনতা বজায় রাখার গুরুত্বের পাশাপাশি মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এতে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হলেও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি।

বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। ফলে অনেকেই মনে করছেন, সামরিক জোট হিসাবে শুরুর অবস্থান থেকে কোয়াড সম্ভবত সরে আসার চেষ্টা করছে। সার্বিক উন্নয়ন কাঠামোর একটি অংশ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে এ জোট। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী পাঁচ বছরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি সহায়তা প্রদান ও বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।