কাজাখস্তানে বিপুল ভোটে সংবিধান সংশোধন অনুমোদন
মধ্য এশিয়ার তেলসমৃদ্ধ দেশ কাজাখস্তানে সংবিধান সংশোধনে বিপুল সমর্থন দিয়েছেন ভোটাররা। গণভোটে ৭৭ শতাংশ ভোটার সংশোধনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা ও নিজের গুরু নুরসুলতান নাজারবায়েভের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। খবর আল-জাজিরার।
রাশিয়ার এই মিত্রদেশে নতুন সামাজিক চুক্তির ভিত্তি স্থাপনে তোকায়েভ এ সংস্কারকে উৎসাহিত করেন। এ নির্বাচনকে তোকায়েভের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে জয় নিশ্চিতের মহড়া হিসেবেও দেখা যেতে পারে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকেরা।
গতকাল সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান নুরলান আবদিরভ বলেছেন, গণভোট বৈধ বলে বিবেচিত হতে পারে। সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। আর নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশের একটু বেশি।
গত জানুয়ারির প্রাণঘাতী বিক্ষোভের সময় অভ্যুত্থানচেষ্টা ঠেকিয়ে দেওয়ার পর সংস্কার প্রস্তাব সামনে আনেন তোকায়েভ। দৃশ্যত, এতে নিজের সাবেক পৃষ্ঠপোষক ৮১ বছর বয়সী নাজারবায়েভ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
গত রোববার ৬৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট বলেন, এই গণভোটের মধ্য দিয়ে তাঁর সংস্কার উদ্যোগ কেবল শুরু হলো। নিজের ভোট দিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যকার সম্পর্কের ধরনে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। মানবাধিকারকে এক নম্বরে রাখা হচ্ছে।
জানুয়ারি সংকটের আগে মনে করা হতো, নাজারবায়েভ ও তাঁর অতিধনী স্বজনদের ছায়ায় শাসনকার্য পরিচালনা করছেন তোকায়েভ। প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও ‘জাতির নেতা’ হিসেবে সাংবিধানিক উপাধি গ্রহণ করেন নাজারবায়েভ। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পদ না থাকলেও নীতিনির্ধারণী বিষয় প্রভাবিত করতে পারেন তিনি।
নতুন সংবিধানে ‘জাতির নেতা’ পদমর্যাদাটি আর থাকছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষক গাজিজ আবিশেভ এএফপিকে বলেন, ‘যেহেতু নতুন সংবিধান এই পদমর্যাদার স্বীকৃতি দিচ্ছে না, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, “জাতির নেতার” যুগ শেষ হলো।’
প্রেসিডেন্টের আত্মীয়স্বজনের সরকারে থাকার পথ রুদ্ধ করে আরেকটি সংশোধনী হয়েছে। এটি নাজারবায়েভের পরিবার ও তাঁর শ্বশুরপক্ষের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের স্পষ্ট বার্তা, যাঁরা জানুয়ারির শুরু দিকে রাজপথে সহিংস বিক্ষোভের পর গুরুত্বপূর্ণ পদ হারিয়েছেন।
সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ‘নতুন কাজাখস্তানের’ প্রচেষ্টা সামনে আনেন নাজারবায়েভেরই বাছাই করা তোকায়েভ। তিনি ২০১৯ সালে নাজারবায়েভের স্থলাভিষিক্ত হন। গণভোটকে ‘সুপার প্রেসিডেনশিয়াল’ শাসন থেকে সরে আসার অংশ বলেও অভিহিত করেন তোকায়েভ।
পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ জানুয়ারিতে রক্তপাতে রূপ নেয়। এতে কমপক্ষে ২৩০ জন নিহত হন। পরিস্থিত সামাল দিতে রুশ নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা জোটের সেনা ডাকা হয়। সহিংসতার জন্য ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাওয়া ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেন তোকায়েভ এবং দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন তিনি।
নাজারবায়েভের মিত্র জাতীয় নিরাপত্তাপ্রধানকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে সহিংসতার মূলে যে নেতৃত্বের লড়াই, সে বিষয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দুজনই রাশিয়ার অনুগত। বিষয়টি ‘কাজাখস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেও আখ্যা দেয় মস্কো।