করোনাকালে সাহসের অনুপ্রেরণা জাপানের সহস্রবর্ষী চেরিগাছ
সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা এই মহামারি করোনাভাইরাসও এক চুল টলাতে পারেনি তাকে। আগে যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, মানুষকে আনন্দ দিত—ঠিক তেমনি দাঁড়িয়ে আছে আজও। হাজারো মানুষের আনন্দের উৎস হয়ে এক হাজার বছর ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থেকে রোল মডেলের সম্মাননা জুটেছে জাপানের এই সহস্রবর্ষী চেরিগাছটির। গাছটি জানান দিয়েছে, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। এত অল্পতে টলে যেতে নেই।
গুডনিউজনেটওয়ার্কে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের এক হাজার বছর বয়সী চেরিগাছটির নাম 'তাকিজাকুরা'। ওয়াটারফল চেরি ট্রি নামেও জানে অনেকেই। জাপানে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা এই গাছটির সৌন্দর্য একনজর দেখতে ভিড় জমান ফুকুশিমার মিহারু এলাকায়। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি আছে। এরই মধ্যে ফুটেছে চেরি ফুল। গত সপ্তাহে কেবল কয়েকজন দর্শনার্থী এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পেয়েছেন।
এই গাছসহ শহরের নানা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক ৫৩ বছর বয়সী সিদাফুমি হিরাতা বলেন, ফুকুশিমার ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর ২০১১ সালে তিনি গাছটি দেখভালের জন্য এখানে চলে আসেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে দাইচি পারমাণবিক প্ল্যান্ট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর তেজস্ক্রিয়ায় আশপাশের শহরেও বিপর্যয় নেমে আসে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক কিছুই। কিন্তু দাইচি পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা 'তাকিজাকুরা'র কিছুই হয়নি। ভূমিকম্প, সুনামি ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়া—কোনো কিছুই তার চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারেনি।
সিদাফুমি হিরাতা বলেন, এই গাছ জীবনে অনেক কঠিন বিপর্যয় দেখেছে, সহ্য করেছে। হয়তো আরও বড় কোনো বিপর্যয়ও দেখবে, তখনো হয়তো সে সবকিছুর সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে। কিছুই হবে না তার। তিনি আরও বলেন, গাছে চেরি ফুল ফুটছে। অথচ এবার কোনো দর্শনার্থী নেই। এভাবে হয়তো আরও এক হাজার বছর ফুল দিয়ে যাবে গাছটি। আর মানুষ এই গাছের থেকেই নেবে শক্তি ও সাহসের অনুপ্রেরণা।