দক্ষিণ কোরিয়ার এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সেনাসদস্যরা। গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে এ কথা জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘটনাটিকে ‘বর্বর কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে উত্তর কোরিয়ার এই কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ৪৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মৎস্য বিভাগে চাকরি করতেন। দুই দেশের সীমান্তে ইয়নিপয়ং দ্বীপ এলাকায় একটি টহল নৌকা থেকে গত সোমবার তিনি নিখোঁজ হন। নৌকায় নিজের জুতা রেখে গিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি পালিয়ে উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। সে দেশের জলসীমায় গিয়ে সেনাসদস্যদের হাতে ধরা পড়েন।
‘নানাবিধ গোয়েন্দা উৎস’ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ওই ব্যক্তিকে মঙ্গলবার লাইফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় ভাসতে দেখে উত্তর কোরিয়ার টহল নৌকা। তাতে থাকা সেনাসদস্যরা মাস্ক পরে দূর থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একজন’ তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেন। ওই আদেশ পেয়ে তাঁকে পানিতে থাকা অবস্থাতেই গুলি করে হত্যা করেন সেনাসদস্যরা। এরপর মৃতদেহের ওপরে তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, এটা অত্যন্ত বর্বর একটা কাজ। উত্তর কোরিয়ার কাছে তারা শক্তভাবে ঘটনার ব্যাখ্যা চায়; জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দেখতে চায়। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে এভাবে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই করতে পারে না উত্তর কোরিয়া। পরিষদের মহাসচিব সুহ-চু-সুক বলেন, এই সামরিক পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের লঙ্ঘন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে। অবশ্য, ‘নানাবিধ গোয়েন্দা উৎস’ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণের কথা বললেও তারা ঠিক কীভাবে এসব তথ্য পেয়েছে, তা পরিষ্কার করেনি। দুই দেশের মধ্যে হটলাইন গত জুনে কেটে দেওয়া হয়। আর দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের স্বার্থে সীমান্তে গড়ে তোলা লিয়াজোঁ অফিস গুঁড়িয়ে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী রেডিও যোগাযোগব্যবস্থায় কান রেখে উত্তর কোরিয়ার ভেতরের খবরাখবর জানতে পারে বলে বার্তা সংস্থা এএফপির ভাষ্য।
হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে উত্তর কোরিয়া কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এই পদক্ষেপকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কৌশল হিসেবেই দেখছেন অনেকে। বিবিসির সিউল প্রতিনিধি লরা বিকার বলেছেন, উত্তর কোরিয়াকে করোনামুক্ত রাখতে যেকোনো কিছু করতে রাজি দেশটির কর্তৃপক্ষ।
চীনে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় গত জানুয়ারিতে দেশটির সঙ্গে থাকা সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। ওই সীমান্তে দেশটি দুই কিলোমিটারজুড়ে ‘বাফার জোন’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। একটি বিশেষ বাহিনীও গঠন করে তারা। সীমান্ত হয়ে কেউ ঢুকলেই তাঁকে ‘গুলি করে মারা’র নির্দেশ ছিল বাহিনীর কাছে। গত মাসে এসব কথা জানিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার রবার্ট আব্রামস।