কমছে জাপানের জনসংখ্যা
জাপানের জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া নতুন কোনো সংবাদ নয়। কয়েক বছর ধরেই নিয়মিতভাবে জনসংখ্যা হ্রাসের হিসাব তুলে ধরছে জাপানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত হিসাবে দেশের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার যে খতিয়ান তুলে ধরা হয়, জাপানের সংবাদমাধ্যম সেটাকে বিপদ সংকেত হিসেবে দেখছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যার হিসাব গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৯ সালে জাপানের জনসংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ২ লাখ ৭৬ হাজার কমেছে। সরকারি উপাত্তে একই সঙ্গে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি সমাজের বয়স্ক মানুষের সংখ্যা এবং জন্মহার কমে যাওয়ার প্রতিফলন তুলে ধরা হয়েছে।
এক বছরের মধ্যে জনসংখ্যা হ্রাসের এই সংখ্যা হচ্ছে, ১৯৫০ সালে হিসাব রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বড় পতন। নতুন পরিসংখ্যানে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর জাপানের মোট জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে জাপানিদের সংখ্যা হচ্ছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার। জাপানে ভূমিপুত্র জাপানিদের সংখ্যা কমলেও বিদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। একই হিসাবে বলা হয়েছে, জাপানে এখন বিদেশি লোকজনের সংখ্যা হচ্ছে ২৪ লাখ ৪০ হাজার, যা হচ্ছে এক বছর আগের চেয়ে ২ লাখ ১১ হাজার বেশি। এই বৃদ্ধির পেছনে আছে গত বছর চালু হওয়া নতুন ভিসাব্যবস্থার অধীনে শ্রমজীবী মানুষের জাপানে আগমন সহজ করে দেওয়া। বৃদ্ধ হয়ে আসা সমাজে শ্রমিকের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে এই পথে জাপান এখন এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে জাপানের জন্য উদ্বেগজনক দিকটি হলো, ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সসীমার কর্মক্ষম জনসংখ্যা দ্রুত কমার পাশাপাশি ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা বাড়া। ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা এখন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি, মোট জনসংখ্যার যা ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে এর ওপরে যাঁদের বয়স, তাঁদের আনুপাতিক হার হচ্ছে ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ, যা হচ্ছে নতুন রেকর্ড এবং দেশের নেতৃত্বের জন্য মাথাব্যথার কারণ। এই বয়সের লোকজন হলেন পেনশনভোগী এবং এঁদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয় সরকারকে। ফলে করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ার পরও খরচ মেটাতে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এসব দিক চিন্তা করে জাপানে অবসর গ্রহণের বয়স কয়েক বছর আগেই ৬৫ বছরে বাড়িয়ে নেওয়া হয়। এখন সেটা বাড়িয়ে ৭০ বছর করার চিন্তাভাবনা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।
জাপানের ৪৭টি জেলার মধ্যে ৪০টিতে জনসংখ্যা হ্রাস পেলেও বড় আকারের শহর রয়েছে সে রকম ৭টি জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে। এই ধারা মফস্বল এলাকা থেকে তরুণ প্রজন্মের লোকজনের শহরে চলে আসার ইঙ্গিত দেয়।
জাপানে বাড়ছে শতায়ু মানুষের সংখ্যা। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা প্রথমবারের মতো ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত বছর জাপানে শতায়ু মানুষ ছিলেন ৭১ হাজার ২৩৮ জন। এখন থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালে এঁদের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৮ জন। ফলে ৩০ বছরে শতায়ু মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হার জাপানে হচ্ছে প্রায় ২৩ গুণ। সন্দেহ নেই দেশের আর্থিক ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক চাপ ফেলছে এটা।
শতায়ুদের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। ৭১ হাজার ২৩৮ জন শতায়ু ব্যক্তির ৮৮ দশমিক ১ শতাংশ হলেন নারী। দেশের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি হলেন একজন নারী। ফুকুওকা শহরের অধিবাসী কানে তানাকার জন্ম ১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে। জেলাওয়ারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি শতায়ু মানুষের বসবাস জাপানের রাজধানীতে। জাপানে গড় আয়ুর দিক থেকেও নারীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে। ২০১৮ সালের হিসাবে নারীর গড় আয়ু ছিল ৮৭ দশমিক ৩২ বছর এবং পুরুষের ৮১ দশমিক ২৫ বছর।