একা বসবাসের অনুমতি পাচ্ছেন সৌদি নারীরা
সৌদি আরবের নারীদের পুরুষ নিকটাত্মীয় কিংবা অভিভাবক ছাড়া একাকী বসবাসের সুযোগ আইনত নিষিদ্ধ ছিল। এই বিধিনিষেধ এবার উঠতে যাচ্ছে। শরিয়াহ আইন সংশোধনের মাধ্যমে অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত অথবা বিধবা নারীদের একাকী বসবাসের অনুমতি দিতে যাচ্ছে সৌদি আরব।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট গত শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শরিয়াহ আইনের ১৬৯(বি) ধারা অবলুপ্ত করতে যাচ্ছে সৌদি আরবের বিচারিক কর্তৃপক্ষ। এর ফলে দেশটিতে নারীরা নিজেদের পছন্দমতো একাকী বসবাসের সুযোগ পাবেন। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর নিজের মতো করে একাকী বসবাসের অধিকার রয়েছে। এর ফলে কেউ যদি অপরাধ করে কারাদণ্ড পান, তাহলে সাজার মেয়াদ শেষে তাঁকে পুরুষ অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করার প্রয়োজন হবে না।
এ বিষয়ে আইনজীবী নাইফ আল–মানসি বলেন, সৌদি আরবে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি একাকী থাকতে চান, তাহলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আর থাকছে না।
গত বছরের জুলাইয়ে সৌদি আরবের লেখিকা মরিয়ম আল–ওতাইবি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে পরিবার ছাড়াই একাকী বসবাস করা ও বাবার অনুমতি ছাড়া ভ্রমণের অধিকার পেয়েছিলেন। ঐতিহাসিক রায়ে আদালত বলেছিলেন, তিনি কোথায়, কীভাবে বসবাস করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাঁর (মরিয়মের) রয়েছে। মরিয়মের বাড়ি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে ২৫০ মাইল উত্তর–পশ্চিমের আল–রাসে। বাড়ি থেকে পালানোর অভিযোগে তিন বছর আগে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি তাঁর বাবা ও ভাইদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের পাল্টা অভিযোগ তুলেছিলেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে এক ঘোষণায় ১৮ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী সৌদি নারীদের আইডি কার্ডে নাম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নাম বদলাতে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন হবে না। এর আগে ২০১৯ সালে সৌদি নারীদের ওপর থেকে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় দেওয়া আদেশে বলা হয়েছিল, বয়স ২১ বছর হলেই সৌদি নারীরা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। দেশটিতে নারীদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখা, রেস্তোরায় গিয়ে পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে বসে খাওয়া ও গাড়ি চালানোর অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উদ্যোগে ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি সমাজে সংস্কার আনার জন্য নারীদের এমন নানা প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে চরম রক্ষণশীল সৌদি সমাজে সংস্কারের পাশাপাশি জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চান যুবরাজ সালমান।