চীনের উহানের পশু কেনাবেচার একটি বাজার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে দাবি করেছেন একজন বিজ্ঞানী। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস গবেষক মাইকেল ওরোবি গত বৃহস্পতিবার সায়েন্স সাময়িকীতে লেখা এক নিবন্ধে এ দাবি করেছেন। ওই বিজ্ঞানী বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস শনাক্তের যে সময়ের কথা বলেছিল, তারও কয়েক দিন পর উহানে করোনা শনাক্ত হয়। খবর এএফপির
প্রায় দুই বছর আগে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ভাইরাসের উৎস শনাক্ত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কখনো বলা হয়েছে, বাদুড় থেকে এ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রথম সংক্রমিত হয়েছে। আবার উহানের ল্যাব থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলেও প্রচার-প্রচারণা আছে। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকেরা ইঙ্গিত দেন, মানুষকে সংক্রমিত করতে সক্ষম এ ভাইরাস দশকের পর দশক ধরে অশনাক্তকৃত অবস্থায় থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
গত মে মাসের মাঝামাঝি মাইকেল ওরোবিসহ ১৫ জন বিশেষজ্ঞ সায়েন্স সাময়িকীতে একটি কলাম লিখেছিলেন। উহানের পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে যে তত্ত্ব প্রচলিত আছে, তা গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
বৃহস্পতিবার সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে ওরোবি দাবি করেছেন, করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে গবেষণায় নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন তিনি। ওরোবি দাবি করেন, পশুর বাজার থেকেই যে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু, সে ব্যাপারে শক্ত প্রমাণ রয়েছে তাঁর কাছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উহানে প্রথম কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তি একজন পুরুষ। উহানের যে বাজারে বন্য প্রাণী ও গৃহপালিত পশু বিক্রি হয়ে থাকে, সেখানে তিনি কখনো যাননি। তবে সে তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন মাইকেল ওরোবি। তাঁর দাবি, উহানে প্রথম একজন নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি ওই বাজারেই কাজ করতেন। কোভিড-১৯-এর উৎপত্তি প্রশ্নে ওরোবি যে তথ্যগুলো দিয়েছেন, তাতে ভাইরাসটি পশুর দেহ থেকে ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, উহানে প্রথম যে ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়, তিনি ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে অসুস্থ ছিলেন। তবে ওরোবির দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যাঁর কথা বলেছে, ওই ব্যক্তি ১৬ ডিসেম্বরের আগে অসুস্থ হননি। প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করেছেন ওরোবি। একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ ও হাসপাতালের তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে আক্রান্ত এক ব্যক্তির যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে ৪১ বছর বয়সী একজনের তথ্য মিলে গেছে।
বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের ভিত্তিতে ওরোবি দাবি করেছেন, প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি একজন নারী, তিনি ওই বাজারে কাজ করতেন। ওই নারী অসুস্থ হন ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দলে কাজ করা বিশেষজ্ঞ পিটার ডাসজাক বলেছেন, ওরোবির বিশ্লেষণটি তাঁর মনঃপূত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘৮ ডিসেম্বরের তারিখটি ভুল ছিল।’