উহান নিয়ে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে না
চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে তদন্ত চালানো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুসন্ধানী দল তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রকাশের পরিকল্পনাটি বাতিল করেছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল নতুন করে অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করেছে।
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জ্যাসারেভিক বলেছেন, পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশিত হবে।
তবে উহান শহরে তদন্ত শেষ হওয়ার পর ওই প্রতিবেদন প্রকাশে এত দেরির কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে মানুষের শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনের পক্ষ থেকে তদন্তদলকে শুরুর দিকের কোভিড-১৯ সংক্রমণ–সংক্রান্ত মূল তথ্য দিতে অস্বীকার করা হয়। ওই তদন্তদলের সঙ্গে যুক্ত গবেষক ডমিনিক ড্রয়ার গত মাসে অভিযোগ করেন, চীনের অসহযোগিতা করোনা মহামারি যেভাবে শুরু হয়েছিল, তা বুঝতে সম্ভাব্য দেরি করাচ্ছে।
বেইজিং ও ওয়াশিংটনের উত্তেজনার কারণে ওই তদন্ত অনেকটাই দেরিতে শুরু হয়। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, চীন প্রাথমিক মহামারির তথ্য লুকিয়েছে। এ ছাড়া তদন্তদলের চীন সফরের শর্ত নিয়েও সমালোচনা করে ওয়াশিংটন। আন্তর্জাতিক তদন্তকারী দলটি গত জানুয়ারি মাসে চীন সফরে যায় এবং চার সপ্তাহ সেখানে গবেষণা চালায়। কিন্তু তাদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে কাটাতে হয়েছিল।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে সব ধরনের ধারণাকেই বিবেচনায় রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
চীনের উহান শহরের গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি, এমন ধারণার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে ডব্লিউএইচওর একটি দল সেখানে যায়। তদন্ত শেষে দলটি ফেরার পর এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তেদরোসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উহানে তদন্তদলের নেতৃত্ব দেওয়া পিটার বেন এমবারেক।
সংবাদ সম্মেলনে তেদরোস বলেন, ‘গবেষক দলটি কঠিন পরিস্থিতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়েছে। কিছু ধারণা বাদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তদলের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিশ্চিত করে বলছি যে সব ধারণাই উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আরও বেশি বিশ্লেষণ ও গবেষণা দরকার।’
করোনা বিপর্যয়ের সূত্রপাত চীনের উহান শহর থেকে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের কর্তৃপক্ষ ২৭ জনের ‘ভাইরাল নিউমোনিয়ায়’ আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায়। ৭ জানুয়ারি দেশটির কর্মকর্তারা এটাকে নতুন ভাইরাস হিসেবে শনাক্ত করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ভাইরাসটির নাম দেয় ২০১৯-এনকভ (কোভিড-১৯)। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঢল নামে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনাভাইরাসের উৎস বাদুড়। এরপর অন্যান্য প্রাণীর মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।