ইরানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আটক, পরে মুক্ত
ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকায়ারকে আটক করা হয়। এক ঘণ্টার বেশি সময় তাঁকে আটক রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ এ তথ্য জানিয়েছে।
ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ভূপতিত হওয়ার ঘটনার নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে গতকাল শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানে আয়োজিত এক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর আটক হন রাষ্ট্রদূত রব।
তেহরানের আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। এ আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব। কর্মসূচিটি একপর্যায়ে বিক্ষোভে রূপ নেয়। তখন ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন রাষ্ট্রদূত রব। পরে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সংগঠনে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।
ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানায়, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব দূতাবাসের দিকে ফিরে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আটক হন। বিক্ষোভ আয়োজন, উসকানি ও উগ্র কর্মকাণ্ডে নির্দেশনার সন্দেহে যেসব ব্যক্তিকে আটক করা হয়, তাঁদের মধ্যে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। তবে কে বা কারা তাঁকে আটক করে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এক ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখার পর ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি এখন ব্রিটিশ দূতাবাসে নিরাপদ ও ভালো আছেন বলে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত রবকে আটকের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব। তিনি বলেছেন, কোনো ভিত্তি বা ব্যাখ্যা ছাড়াই রাষ্ট্রদূতকে আটকের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।
৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে গত বুধবার ভোরের দিকে মার্কিন সেনারা থাকেন—ইরাকে এমন দুটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর কয়েক ঘণ্টা পর তেহরানের উপকণ্ঠে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। এতে উড়োজাহাজের ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হন।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করে আসছিল কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। প্রথমে এই দাবি অস্বীকার করে তেহরান। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ আন্তর্জাতিক তদন্তের কারণে বাড়তে থাকা চাপের মুখে গত শুক্রবার ইরান স্বীকার করে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। তবে ইচ্ছাকৃত নয়, শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান ভেবে ভুলে এমনটা হয়েছে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা হবে।
ইরানের স্বীকারোক্তির পর দেশটিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার ঘটনা শুরুতে অস্বীকার করায় বিক্ষোভকারীরা ইরান সরকারকে ‘মিথ্যুক’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।