ইরানকে 'বড় ধরনের মূল্য' দিতে হবে: ট্রাম্প
ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার নববর্ষের প্রাক্কালে এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, যেকোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইরানকে ‘বড় ধরনের মূল্য’ দিতে হবে।
বিবিসি অনলাইন ও বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় মিলিশিয়া সদস্যদের মৃত্যুর জেরে ক্ষোভ জানাতে বিক্ষোভকারীরা গতকাল ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাইরের দিকের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দূতাবাসের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস ছোড়েন। ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও অন্য কর্মীদের দূতাবাস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পরে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপের ঘোষণা দেন, সেখানে দ্রুত সাড়ে সাত শ সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। টুইটে তিনি বলেন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেখানেই দেখা যাবে, সেখানেই যুক্তরাষ্ট্র তার জনগণ ও স্বার্থ রক্ষা করবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর টুইটে বলেন, ‘আমাদের যেকোনো অবস্থানে প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইরান সম্পূর্ণ দায়ী থাকবে। তাদের অনেক বড় মূল্য চুকাতে হবে! এটা সতর্কবার্তা নয়, এটা হুমকি। শুভ নববর্ষ!’
ইরানের মদদে হামলার ঘটনা ঘটেছে—ট্রাম্পের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইরান এ ধরনের অভিযোগের ‘স্পর্ধা’ নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করেছে।
গত রোববার ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা মিলিশিয়া গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর (হিজবুল্লাহ ব্রিগেড) সদস্য। হামলায় আহত হয়েছিলেন আরও ৫৫ জন। কাতাইব হিজবুল্লাহ ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে ও সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত ইরান সমর্থিত বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, কাতাইব হিজবুল্লাহ ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইরত ইরাকে অবস্থিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর ঘাঁটিতে বারবার হামলা চালাচ্ছে।
মার্কিন বিমান হামলায় ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনার সময় এসেছে। এরপর গতকাল রাজধানী বাগদানের অত্যন্ত সুরক্ষিত গ্রিন জোনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় দূতাবাসের বাইরে জড়ো হওয়া হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রোববারের বিমান হামলার প্রতিবাদ জানায়। দূতাবাসের ফটকে পাথর ছোড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধিক জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। ইট–পাথর ছুড়ে নজরদারির ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় নজরদারির একটি টাওয়ারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দূতাবাসটিতে কাতাইব হিজবুল্লাহর পতাকাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
মার্কিন বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের জানাজা গতকাল বাগদাদে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাসের কাছে জড়ো হয়। বিক্ষোভে হাজার হাজার শোকাহত মানুষের সঙ্গে কাতাইব হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিস সহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মিলিশিয়া নেতা, ইরান মদদপুষ্ট আসাইব আহলে আল-হক মিলিশিয়ার প্রধান কাইস আল-খাজালি, মিলিশিয়া কমান্ডার জামাল ঝাফর ইব্রাহিমি, বদর অর্গানাইজেশনের নেতা হাদি আল-আমিরিও এবং আধা সামরিক বাহিনীর নেতারা যোগ দেন। দূতাবাসের বাইরের রাস্তায় তাঁদের সমবেত হতে দেয় ইরাকি বাহিনী। বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাস বন্ধের দাবি জানান।
কাতাইব হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিস বলেন, ইরাকে আমেরিকা বাহিনীকে এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
কাইস আল-খাজালি বলেন, ‘আমেরিকানরা ইরাকে অবাঞ্ছিত। তারা শয়তান। আমরা তাদের বিতাড়িত করতে চাই।’
বিক্ষোভ কয়েক ঘণ্টা চলার পর প্রধানমন্ত্রী মাহদি বিক্ষোভকারীদের দূতাবাস প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দূতাবাস ও বিদেশি প্রতিনিধিদের ওপর যেকোনো হামলা বা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবে। আর এ ধরনের কর্মকাণ্ডে গুরুতর সাজা দেওয়ার বিধান রয়েছে।
ট্রাম্প জানান, তিনি আশা করেন, ইরাকি বাহিনী মার্কিন দূতাবাস ও এর কর্মীদের সুরক্ষা দেবে। তিনি হামলার পরপর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদিকে ধন্যবাদ জানান।