ইন্দোনেশিয়ায় সুনামিতে ৬ মিটার উঁচু ঢেউ
ইন্দোনেশিয়ায় পালু শহরে ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপের পালু শহরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামি হয়। সুনামিতে সৃষ্ট প্রায় ছয় মিটার (২০ ফুট) উঁচু ঢেউ পালু শহরকে ভাসিয়ে দেয়।
ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে হাজারো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। কিন্তু এ সুনামি অনেকটাই বিজ্ঞানীদের মনে ধাঁধার সৃষ্টি করেছে। জরুরি উদ্ধারকারী ও বিজ্ঞানীরা এত বড় ঢেউ সৃষ্টির কারণ জানার চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে এ বছরে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের রেকর্ড এটি। বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম দ্বীপ সুলাবেসির পালু শহরে শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সেখানে কম্পনের পর আছড়ে পড়ে প্রলয়ংকরী সুনামির ঢেউ। সুউচ্চ ঢেউ লন্ডভন্ড করে দেয় উপকূলীয় এলাকা।
এএফপির খবরে জানানো হয়, ভূতাত্ত্বিকেরা এটিকে ‘স্ট্রাইক-স্লিপ’ ঘটনা বলছেন, যাতে ভূত্বক পরিবর্তিত হয় অনুভূমিকভাবে। এ ধরনের নড়াচড়ায় সাধারণত সুনামি হয় না। এ ঘটনায় ওই দ্বীপের চ্যুতির পূর্ব দিকের শিলা ঘুরে উত্তর দিকে গেছে। এ ধরনের ঘটনায় সুনামি হলেও এতে ছয় ফুট উচ্চতার ঢেউ সাধারণত দেখা দেয় না। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্পের পর বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে পালু শহরের সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কয়েক দফা বড় ঢেউ তৈরিতে সাগরতলে বড় ধরনের অবস্থান পরিবর্তনের ঘটনা ঘটতে হবে। অর্থাৎ, উল্লম্ব আন্দোলনের ঘটনা ঘটে পুরো পানির স্তরকে ওলট-পালট করলে পানি যেকোনো দিকে ছুটতে পারে। কিছু প্রাথমিক হিসাবে দেখা যায়, সাগরতলে যে স্থানচ্যুতি ঘটেছে, এটি উল্লেখযোগ্য হলেও তা এত বড় ঢেউ তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। তাহলে ঠিক কী কারণে এত বড় ঢেউ সৃষ্টি হলো?
গবেষকেরা বলছেন, ভূমিকম্পের ফলে পানির নিচের ভূমিধসের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। এতে সৈকতের দিকে বড় ধরনের ঢেউ আঘাত হানতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ হায়দারজাদেহ বলেন, ‘আমার হিসাব বলছে, ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের বিকৃতি ৪৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এতে সর্বোচ্চ এক মিটার পর্যন্ত সুনামি হতে পারে। কিন্তু ছয় মিটার পর্যন্ত নয়। অন্য কিছু ঘটতে পারে। সম্ভাব্য দুটি কারণ হচ্ছে বিশাল ভূমিধস ও উপসাগরে তৈরি ফানেল। পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝতে বাথিমেট্রিক জরিপ করতে হবে।’
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিধস বিশেষজ্ঞ ডেভ পেটলি বলেন, কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবি অনুযায়ী, বাড়ির ভর একটি ছোট এলাকায় কেন্দ্রীভূত ছিল। ভূপৃষ্ঠের একটি বিশাল এলাকা খালি ছিল। ওই এলাকায় আগে বসতি ছিল। এ ঘটনাকে লিকুইয়াফিকেশন বলা হয়, যাতে ভূপৃষ্ঠের গঠন ভেঙে পড়ে এবং সক্রিয় ভূমিধসের সৃষ্টি করে। ওই এলাকা পর্যবেক্ষণে প্রভাব বোঝা যাবে।