আহা রে...
চোখ ধরে যায়। মাথায় লাগে ঝিম। বোবা কান্নায় বুক ভাসে। হৃদয় ভাঙে। নিজের অজান্তে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘আহা রে...’।
দৃশ্যটি মর্মস্পর্শী। জার্মান উদ্ধারকর্মীর কোলে এক শিশু। তার বয়স কয়েক মাস হবে। শিশুটির চোখ বন্ধ। প্রথমে মনে হবে, সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শিগগিরই ভুল ভাঙবে। শিশুটি নিথর, দেহে প্রাণ নেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, গত সপ্তাহে লিবীয় উপকূলে শরণার্থীবোঝাই নৌকাডুবিতে মারা গেছে শিশুটি। ওই নৌকাডুবিতে আরও অনেকে মারা গেছে। অনেককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সাগর থেকে গত শুক্রবার শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীবোঝাই একাধিক নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব নৌকাডুবিতে অন্তত ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ওই শরণার্থীরা লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
নিথর দেহের শিশুটিকে উদ্ধারের ছবিটি প্রকাশ করেছে জার্মানির মানবিক সহায়তা সংগঠন সি-ওয়াচ। সংগঠন বলছে, শরণার্থীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই তারা এই মর্মস্পর্শী ছবিটি প্রকাশ করেছে।
শিশুটির পারিবারিক নাম প্রকাশ করতে চাননি উদ্ধারকারী। এক ই-মেইলে তিনি জানিয়েছেন, পানিতে একটা পুতুলের মতো শিশুটিকে পেয়েছেন। তার বাহু ছিল বাড়ানো। পানি থেকে দ্রুত যত্নের সঙ্গে শিশুটিকে তুলে আনেন তিনি। এরপর কোলে তুলে নেন, যেন এখনো বেঁচে আছে শিশুটি। তার কচি হাতের আঙুলগুলো ছিল মুষ্টিবদ্ধ। চোখ ছিল চিরদিনের জন্য বন্ধ।
উদ্ধারকারী নিজেও একজন বাবা। এই দৃশ্য দেখে তাঁর হৃদয় ভেঙে গেছে। তাঁর মনে হয়েছে, আহ্, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও শিশুটি বেঁচে ছিল।
শিশুটির সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে। শিশুটির মরদেহ ইতালির নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে সি-ওয়াচ। শিশুটি ছেলে নাকি মেয়ে, তাও নিশ্চিত করেননি উদ্ধারকারীরা। তা ছাড়া জীবিত উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের মধ্যে তার বাবা বা মা আছেন কি না, তাও নিশ্চিত করা হয়নি।
গত বছর তুরস্কের একটি সৈকতে সিরীয় শরণার্থী শিশু আয়লানের নিথর দেহ পাওয়া যায়। তার মরদেহের ছবি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে সেটি শরণার্থী সংকটের হৃদয়বিদারক প্রতীকে পরিণত হয়। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এরপরও শরণার্থী সংকটের সমাধান হয়নি। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।