আবারও স্কুল বন্ধ: তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা বাতিল
কাতারে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার তা থেকে সরে আসায় এমন ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। খবর আল জাজিরার।
চলতি মাসের শুরুর দিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার মেয়েদের স্কুলে ফেরানোর পক্ষে তাঁদের অবস্থান জানায়। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, স্থানীয় সময় গত বুধবার সকাল থেকেই রাজধানী কাবুলসহ দেশটির বিভিন্ন শহরের স্কুলগুলোতে আসা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তবে কয়েক ঘণ্টা পর আবার তা বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সরকার। এমন অবস্থায় নারীশিক্ষার বিষয়ে তাদের নীতি নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তালেবানের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে কাতারে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনার কথা ছিল।
গতকাল শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, নারী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্কুলে যেতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে তালেবান সরকার সরে আসায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশ। তিনি বলেন, ‘কাতারের রাজধানী দোহায় বৈঠক করাসহ আমাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের যে পরিকল্পনাগুলো হয়েছিল তার কিছু কিছু বাতিল করে দিয়েছি। আমরা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছি, এ সিদ্ধান্তের কারণে আলোচনা ভিন্ন দিকে মোড় নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই মুখপাত্র আরও বলেছেন, ‘তালেবান যদি খুব দ্রুত তাদের সিদ্ধান্ত না পাল্টায়, তাহলে তা আফগান জনগণ ও দেশটির প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তালেবান যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তার ওপরও এর প্রভাব পড়বে।’
কয়েক সপ্তাহ আগে তালেবানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রায়ান স্কুল খোলার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া তালেবানের দায়িত্ব।
স্কুল খোলার আগে তালেবান ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের আলাদাভাবে বসানো এবং ইসলামি নিয়ম মেনেই স্কুলগুলো পরিচালনার করার ওপর জোর দিয়ে আসছিল।
চালু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তে হৃদয়বিদারক চিত্র দেখা গেছে রাজধানী কাবুলের বিভিন্ন গার্লস স্কুলে। কাবুলের জারগোনা হাইস্কুলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেছে।
কাবুলের ওমরা খান গার্লস স্কুলের শিক্ষক পালওয়াশা বলেন, ‘আমি ছাত্রীদের কাঁদতে কাঁদতে শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে যেতে দেখেছি। তাদের কান্না দেখাটা খুবই কষ্টকর।’
স্কুল বন্ধ করায় তালেবানের ওপর আস্থা কমে গেছে বলে টুইট করেন আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত রিনা আমিরি।
তালেবানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।