আমেরিকা তার ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তান ছাড়ছে। ভিয়েতনাম থেকে ফেরার মতোই এটা। সেখান থেকে ফিরেছিল তারা ১৮ বছর ৯ মাসে। তাদের পাঁচ প্রেসিডেন্ট ধারাবাহিকভাবে ওই যুদ্ধে শরিক ছিলেন। আর আফগান যুদ্ধের ২০ বছরে বুশ ও ওবামার দুই মেয়াদ ছাড়াও ট্রাম্প ও বাইডেনের আমল সাক্ষী হয়ে থাকল।
দুই জায়গা থেকেই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরল ওয়াশিংটন। ভিয়েতনামে ৫৯ হাজার জনবল হারায় তারা। সেই তুলনায় আফগানিস্তানে ক্ষতি কম—আড়াই হাজারের মতো। আর্থিক অপচয় আফগানিস্তানে বেশি—প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার।
এসব হিসাব ছাড়িয়ে ভিয়েতনামের মতোই আফগানিস্তানেও আমেরিকা পাহাড়সম মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষত রেখে যাচ্ছে। ২০ বছরে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছে সেখানে।
আফগান যুদ্ধে স্থানীয় সমাজের জয়!
ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তান যুদ্ধের অনেক মিল থাকলেও অমিলটাই বড় হয়ে দেখা যাচ্ছে। ভিয়েতনামে যুদ্ধ শেষে ছিল স্থানীয় সমাজে তীব্র আশাবাদ, একটা নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ার স্বপ্ন। কাবুলে এই মুহূর্তটি অনিশ্চয়তার কালোমেঘে ঢেকে আছে। বিদেশি সেনাদের বিদায়ে বিজয়ের উৎসব নেই সেখানে। দেশের সব দিকে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানির শঙ্কা বাড়ছে প্রতিদিন।
আফগান যুদ্ধের মধ্যে আমেরিকা ইরাকেও যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। উভয় জায়গায় তাদের বড় ব্যর্থতা, পছন্দমতো কোনো টেকসই সরকার গড়তে না পারা। এ মুহূর্তে ন্যাটোর সৈন্যরা যখন আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে চলে যাচ্ছেন, তখন চরম অনিশ্চয়তায় পড়বে তাদের এত দিনের স্থানীয় সহযোগীরা। খুব শিগগির এরা যে পুরোনো প্রতিপক্ষদের খাদ্যে পরিণত হবে, সেটা প্রায় নিশ্চিত। ইতিমধ্যে কাবুলে ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে—কত দিন আমেরিকার পুতুল সরকার টিকবে! সর্বোচ্চ মেয়াদ ধরা হচ্ছে ছয় মাস। ইতিমধ্যে প্রদেশগুলোর নিয়ন্ত্রণ অনেকখানি হারিয়েছে রাজধানী।
আমেরিকার এই ব্যর্থতা আবারও প্রমাণ করছে, বন্দুকের জোরে কোনো সমাজেই স্থানীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টে দেওয়া যায় না। সেই কাজ রাজনৈতিক, রাজনীতিবিদদেরই সেটা করতে হয়; এর সামরিক বিকল্প নেই। আফগান যুদ্ধে আমেরিকার বিরুদ্ধে স্থানীয় সামাজিক শক্তির জয় হয়েছে। এই শিক্ষা বিশ্বজুড়ে সামরিক আগ্রাসন কমালে সেটাই হবে আফগান যুদ্ধ শেষের ভালো প্রাপ্তি।
গৃহযুদ্ধের শঙ্কা থাকছেই
তালেবান নিয়মিত বলে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের পর তারা কোনো বিদেশি সৈন্যকে দেশে সহ্য করবে না। এর অর্থ, ন্যাটোর সমর্থন নিয়ে টিকে থাকা কাবুল সরকারকে এবার দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আপন শক্তিতে, যা অসম্ভব। এই সরকারের অনেক সেনা তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইছেন না। অনেকে নিজেদের অবস্থান ছেড়ে তালেবানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এই সূত্রে তালেবান অনেক উন্নত অস্ত্র এবং ন্যাটোর রেখে যাওয়া যানবাহন পাচ্ছে নির্বিঘ্নে।
উত্তরাঞ্চল থেকে প্রায় ১১০০ সরকারি সৈন্য অবস্থান ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে তাজিকিস্তানে। সরকারি সৈন্যদের মনোবল কত দুর্বল, এ ঘটনা তার বড় সাক্ষী। এই সীমান্তের বাদাকশান প্রদেশের অধিকাংশ জেলা এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।
আমেরিকার সৈন্যরা যত দেশে ফিরছেন, আফগানিস্তানজুড়ে তালেবানের ছায়া প্রশাসন তত দৃশ্যমান হচ্ছে। দেশের যেসব এলাকা এত দিন দখল করতে পারেনি তারা, সেসবও দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসছে। সব মিলে দেশটির ৪২১ জেলার প্রায় অর্ধেকে সুবিধাজনক অবস্থায় আছে তালেবান। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলে তালেবানের অগ্রযাত্রা রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের বিস্মিত করেছে। এসব অঞ্চলে তাজিক ও উজবেকদের আধিপত্য বেশি। এদের ঐতিহাসিকভাবে তালেবানবিরোধী শক্তি মনে করা হতো। কিন্তু তালেবান এদের অনেককে কাছে টানতে পেরেছে, যা তাদের বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলের প্রমাণ।
তবে সামরিকভাবে অপ্রতিরোধ্য থাকলেও তালেবানরা তাদের প্রতি আস্থার সংকট থেকে অন্যদের মুক্তি দিতে পারছে না। বিশেষ করে অনেক জাতি ও গোত্রে বিভক্ত আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত একটা সরকার গঠনে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তাই বিবাদের শর্ত থেকেই যাচ্ছে। উদ্বেগে আছে নারীসমাজ ও শিক্ষার্থীরাও। স্কুল-কলেজ নিয়ে তালেবান পুরোনো অবস্থানে থাকবে, নাকি নতুন কোনো নীতি নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। নারীসমাজের চলাফেরায় আগের মতো এখনো কঠোর বিধিনিষেধের পক্ষে তারা। যেসব জেলা তাদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে, সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদমাধ্যমের মাঠপর্যায়ের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং সংঘাত ও হতাহতের স্থানীয় বিবরণ আর মিলছে না। তবে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সংবাদমাধ্যমের ওপর নতুন করে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।
সামরিক ফ্রন্টের পাশাপাশি কূটনীতিক পরিসরেও তালেবানের সফলতা বিপুল। মাঠে শক্তিশালী অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতি পুরোনো নেতিবাচক মনোভাব পাল্টাচ্ছে। ভারত, রাশিয়া, চীনের তালেবান নীতিতে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তালেবান দ্রুত এককভাবে ক্ষমতায় আসতে চায়। তবে দেশজুড়ে আঞ্চলিক বিভিন্ন শক্তির হাতেও বিপুল অস্ত্র ও জনবল আছে। তাদের বাদ দিয়ে তালেবান একাই সরকার পরিচালনায় উদ্যোগী হলে সামরিক সংঘাতের শঙ্কা থাকবেই।
রাশিয়া ও মধ্য এশিয়াকে শরণার্থীর ভাগ নিতে হবে
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ফেরায় সবচেয়ে খুশি রাশিয়া, চীন ও ইরান। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতিতে এসব দেশের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ারও উপাদান আছে।
তালেবাননিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন সশস্ত্র গোপন দলের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়ার সুযোগ আছে, যা বিশেষভাবে রাশিয়া ও আশপাশের দেশগুলোর জন্য হুমকি। তালেবানদের ক্ষমতায় থাকতে হলে এই উদ্বেগ দূর করতে হবে। রাশিয়া এ মুহূর্তে সে রকম দর-কষাকষিতে আছে। এ বিষয়ে তালেবান তাদের আশ্বস্ত করতে পারলেও আইএসসহ অ-তালেবান গ্রুপগুলো থেকে আগামী দিনে আফগানিস্তানের উত্তর সীমান্তে অস্থিরতার শঙ্কা থাকছেই।
কাবুলে তালেবান সরকার নিয়ে মস্কোর আপত্তি নেই। তবে আমেরিকা চলে যাওয়ামাত্র আফগানিস্তানে নতুন করে সহিংসতা বাড়লে রাশিয়াসহ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে শরণার্থীর কিছু ভাগ নিতে হবে। মহামারির মধ্যে কোনো দেশ সেটা চাইছে না।
বহুমাত্রিক লাভ দেখছে চীন-পাকিস্তান
আফগান পরিস্থিতিতে নিজেদের জন্য সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখেছে চীন। তালেবাননিয়ন্ত্রিত অবস্থাতেই আফগানিস্তানকে পেতে উদ্গ্রীব তারা। চীন পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান তার অর্থনৈতিক করিডরে আফগানিস্তানকেও যুক্ত করতে পারবে বলে আশা করছে। তালেবানের জন্যও এটা সুবিধাজনক হবে। ক্ষমতা পেলে দেশের পুনর্গঠনে ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে অর্থকড়ির উদার সহায়তা লাগবে তাদের। তালেবান-বেইজিং এই সমীকরণ সফল হলে পাকিস্তানেরও এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বাড়বে। আফগানিস্তান পাকিস্তানের জন্য বড়সড়ো বাজারও বটে। এসব মিলিয়ে আমেরিকার দেশে ফেরা থেকে চীন ও পাকিস্তানই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে আশাবাদী অবস্থায় আছে। বালুচিস্তান থেকে কান্দাহার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ গড়তে চায় তারা তালেবানকে সঙ্গে নিয়ে।
তবে পাকিস্তানের জন্য নীরব এক বিপদের দিক হলো, আফগানিস্তানে তালেবানদের শক্তিশালী অবস্থান তাদের দেশে অনুরূপ রাজনৈতিক শক্তির জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনার কারণ হয়ে উঠবে।
তালেবানের পাকিস্তানি শাখা হলো তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি। এদের প্রায় পাঁচ হাজার সশস্ত্র কর্মী আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে আছে। কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া মানে টিটিপির জন্য আফগানিস্তান নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠা। এরপর টিটিপি অবশ্যই নিজ দেশে একইভাবে ক্ষমতাশালী হতে চাইবে। দেশটির আফগান সীমান্তবর্তী ট্রাইবাল এলাকায় তাদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে এখনই। এ ছাড়া পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও সরকারে দেশের তালেবানের মোকাবিলায় নৈতিক সাহসের সংকট আছে। পাশের দেশে তালেবানের মদদ দিয়ে নিজ দেশে একই আদর্শের কর্মীদের গুলি চালানোর ন্যায্যতা খুঁজে পাওয়া এই শাসকদের পক্ষে কঠিন। উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনাবাহিনীর ওপর প্রায়ই হামলা হয় এবং আসন্ন দিনগুলোতে এটা বাড়ার প্রবল শর্ত তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তানের জন্য আরেক বিপদের দিক হলো, তালেবান রাজত্বে যদি শান্তি না আসে, তাহলে লাখ লাখ আফগান শরণার্থীর দেশে ফেরাও অনিশ্চিত থাকবে।
আফগান যুদ্ধের মধ্যে আমেরিকা ইরাকেও যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। উভয় জায়গায় তাদের বড় ব্যর্থতা নিজেদের পছন্দমতো কোনো টেকসই সরকার গড়তে না পারা।
সব মিলে, আফগানিস্তানে তালেবানকে মদদ দিয়ে পাকিস্তান নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনছে কি না, সেটা বিশাল এক প্রশ্ন। কোনো কোনো রাজনৈতিক ভাষ্যকার মনে করেন, পাকিস্তান বড় এক জুয়া খেলায় বসেছে এবার। চীন-পাকিস্তানের ৬০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক করিডর স্থিতিশীল আফগানিস্তানকে সঙ্গে পেলে বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। আবার চীন-রাশিয়ার স্বীকৃতি পেলে আফগান তালেবানের পাকিস্তান-নির্ভরতা অনেক কমে যাবে। তখন টিটিপিকে আরেকটি আফগানিস্তানের জন্য এগোনোর ইঙ্গিত দিতে দেরি করবে না তালেবান।
ভারতীয় স্বার্থের ক্ষয়ক্ষতি
আশপাশের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে আসন্ন আফগানিস্তান নিয়ে বেশি দুর্ভাবনায় আছে ভারত। দুই দশকে ন্যাটোর দূরবর্তী মিত্র হিসেবে দেশটিতে তারা যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে, তার পুরোটা পানিতে ধুয়েমুছে যেতে চলছে। ভারত তালেবানের তরফ থেকে প্রতিশোধের এত বেশি শঙ্কা করছে যে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে আনতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
কাবুল ছাড়াও আফগানিস্তানে ভারতের চারটি কনস্যুলেট থেকে এত দিন ন্যাটো-সমর্থিত সরকারের সঙ্গে মিলে যেসব ‘কর্মসূচি’ পরিচালিত হয়েছে, তার অনেক কিছু এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হেরাত ও জালালাবাদের কনস্যুলেট অপারেশন আগেই বন্ধ হয়েছে। মাজার-ই-শরিফ ও কান্দাহারের কাজকর্মও বন্ধের পথে।
আফগান পরিস্থিতির অপ্রত্যাশিত মোড় পরিবর্তনে ভারতের আফগান-নীতিও আমূল বদলে গেছে। তালেবানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসার চেষ্টায় আছেন তাদের কূটনীতিকেরা। পাকিস্তানের বাধায় সেটা সহজ হবে না।
আফগানিস্তানে ভারতের যারা ঐতিহাসিক মিত্রশক্তি, সেই তাজিক ও উজবেকদের দুর্বল দশা নয়াদিল্লির জন্য একটা খারাপ বার্তা। তালেবাননিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্যও ভারতের শঙ্কার কারণ হতে পারে। আফগান মুজাহিদরা আমেরিকাকে পরাজিত করার উদ্দীপনায় কাশ্মীরের দিকেও নজর দিতে পারেন এবং তাতে পাকিস্তানের নীরব সায় থাকারও ভয় করছে নয়াদিল্লি।
তালেবাননিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানকে গভীর মনোযোগে রাখছে ইরানও। ঘরের কাছ থেকে আমেরিকা বিতাড়িত হওয়ায় তারা খুশি। কিন্তু আফগানিস্তানে আইএস শক্তিশালী হয়ে উঠলে ইরানে প্রতিশোধ হামলার শঙ্কা আছে। স্থানীয় শিয়া ‘হাজারা’দের নিরাপত্তা নিয়েও তেহরান উদ্বিগ্ন। ভারতের মতোই তাদের কূটনীতিকেরাও মাজার-ই-শরিফ ছেড়েছেন। তবে তালেবানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক অতীতের মতো আর তিক্ত নেই। তাতে শিয়াদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা কতটা বন্ধ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা মিলছে না। বিশেষ করে তালেবান রাজত্বে আফগানিস্তানে আইএস কতটা শক্তিশালী হয়ে উঠবে, তার ওপর হাজারাদের নিরাপত্তা নির্ভর করছে।
আমেরিকার ‘প্ল্যান-বি’ সম্পর্কে যখন কেউ কিছু জানে না!
চীন, পাকিস্তান ও ইরানের দিক থেকে সবুজসংকেত আফগানিস্তানে তালেবানের জন্য এই মুহূর্তে বড় এক স্বস্তি। তবে দেশটিতে সরকার গঠন প্রশ্নে পাকিস্তান ও চীনের অবস্থানের সঙ্গে ইরানের মতভেদ আছে। ইরান মনে করে, কাবুলে এমন একটা সরকার থাকা উচিত, যারা সব জাতি, ধর্ম, বর্ণের প্রতিনিধিত্ব করবে। তেহরানের এই অবস্থান রাশিয়া ও ভারতের অবস্থানের কাছাকাছি হলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দেশটি চীনের দিকেই ঝুঁকে আছে। চীনের সঙ্গে ইরানের অর্থনৈতিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক ব্যাপকতা আফগানিস্তান প্রশ্নেও দুই দেশকে কাছাকাছি রাখছে। ইরান ও চীনের এই ঘনিষ্ঠতা আফগানিস্তান ছাড়িয়ে মধ্য এশিয়াতেও প্রভাব ফেলবে। তবে আফগানিস্তান পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেই কেবল সেটা হতে পারে। সংঘাত-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় গেলে পাকিস্তান, ইরান, চীন, রাশিয়া—সবার জন্য সেটা দীর্ঘস্থায়ী দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেওয়া অসম্ভব নয়। বিশেষ করে আফগানিস্তান নিয়ে আমেরিকার ‘প্ল্যান-বি’ সম্পর্কে কেউ যখন স্পষ্টভাবে কিছু জানে না।
আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ