অ্যাসিডে গলিয়ে দেওয়া হয় খাসোগির লাশ!
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির লাশ অ্যাসিড দিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পরামর্শক ইয়াসিন আকতায়। আজ শুক্রবার এই দাবি করেন তিনি। ইয়াসিন বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস, খুনের পর খাসোগির লাশ কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। এরপর লাশের টুকরাগুলোর ওপর অ্যাসিড ঢেলে তা নিশ্চিহ্ন করা হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, এক মাস আগ থেকে নিখোঁজ সাংবাদিক খাসোগির বিষয়ে প্রথম কিছু সংবাদ প্রকাশ করেছিল ওয়াশিংটন পোস্ট। এই সংবাদমাধ্যমেই প্রদায়ক হিসেবে কাজ করতেন খাসোগি। ওই সময়কার খবরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুর্কি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগিকে হত্যার পর লাশ কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। পরে অ্যাসিড ঢেলে খাসোগির লাশ নিশ্চিহ্ন করা হয় বলেও দাবি করেছিলেন ওই তুর্কি কর্মকর্তা। এবার সেই তত্ত্বকেই সমর্থন করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের পরামর্শক ইয়াসিন আকতায়।
ইয়াসিনের মতে, এ ছাড়া খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার আর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। ইয়াসিন বলেন, ‘আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি যে খাসোগির লাশ শুধু টুকরা টুকরা করে কাটাই হয়নি, একই সঙ্গে তা নিশ্চিহ্নও করা হয়েছে।’ শুক্রবার স্থানীয় পত্রিকা ‘হুরিয়েত’-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ইয়াসিন। তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তাতে দেখা গেছে, খাসোগির লাশ কেটে টুকরা করার কারণ একটাই। নিশ্চিহ্ন করা সহজ হবে মনে করেই এ কাজ করা হয়েছিল।’
জামাল খাসোগি গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব স্বীকার করে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। তবে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও এতে রাজপরিবার জড়িত নয় বলে দাবি করছে সৌদি আরব। এখনো পর্যন্ত খাসোগির মৃতদেহের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সৌদি আরবও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, খাসোগির লাশ অ্যাসিডে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে—এর ফরেনসিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ইয়াসিন আকতায় আরও বলেছেন, খাসোগির লাশ নিশ্চিহ্ন করতে তা বাষ্পীভূত করা হয়েছে।
এদিকে খাসোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করার আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এক ফোনালাপ পাওয়া গেছে। তাতে হোয়াইট হাউসকে তিনি বলেছিলেন, খাসোগি ‘বিপজ্জনক ইসলামি কট্টরপন্থী’ ছিলেন। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ ও ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাসোগিকে হত্যার কথা সৌদি আরব স্বীকার করার আগেই এমন মন্তব্য করেছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। বিবিসি বলছে, খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পরের ফোনালাপ এটি।
খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই প্রকাশ্যে সৌদি আরবকে দোষী সাব্যস্ত করছিল তুরস্ক। তবে গত সপ্তাহে সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান কথা বলার পর থেকে এ বিষয়ে সুর কিছুটা নরম করেছে তুরস্ক। দুই পক্ষ এখন তদন্তে নিজেদের সহযোগিতা করার নীতি নিয়েছে।