ছবি আঁকতে নিজের রক্ত

নিজের রক্ত দিয়ে ছবি আঁকছেন এলিতো সিরকা
ছবি: রয়টার্স

সামনে সাদা ক্যানভাস, তাতে চলছে তুলির আঁচড়। ক্যানভাসে ফুটে উঠছে টকটকে লাল রঙের নানা অবয়ব। আপাতদৃষ্টে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হবে। তবে যদি বলা হয়, ওই লাল রং আসলে রক্ত, তাহলে একে বিচিত্র ঘটনাই বলতে হবে। ফিলিপাইনের এক চিত্রশিল্পী ঠিক এ কাজই করছেন।

ওই চিত্রশিল্পীর নাম এলিতো সিরকা। বয়স ৫২ বছর। জন্ম নিম্নবিত্ত একটি পরিবারে। ছেলেবেলা থেকেই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ কম ছিল সিরকার। ছবি আঁকার তীব্র আগ্রহ থাকার পরও ছিল প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। তাই রং হিসেবে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করা শুরু করেন সিরকা। এ তালিকায় ছিল টমেটো থেকে শুরু করে অন্যান্য রঙিন ফল ও সবজিও। এভাবে ছেলেবেলাতেই একসময় রক্তকে রং হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন তিনি।

ছবি আঁকতে সিরকা নিজের রক্ত ব্যবহার করেন। প্রতি তিন মাস পরপর হাসপাতালে যান তিনি। শরীর থেকে বের করেন ৫০ মিলিলিটার রক্ত। তারপর সেই রক্ত সংরক্ষণ করেন ফ্রিজে, যেন ভবিষ্যতে তা দিয়ে ছবি আঁকা যায়। ছবি আঁকতে আঁকতে সিরকা বললেন, ‘আমি রক্ত দিয়ে ছবি আঁকি। কারণ, রক্তের দাগ মুছে ফেলা কঠিন।’

সিরকার কথায়, ‘আমার আঁকা ছবিগুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেগুলো আমার শরীর থেকে সৃষ্টি হয়েছে। আমার রক্ত দিয়ে আঁকা হয়েছে। আমার ডিএনএ ছবিগুলোতে রয়েছে। আমার দর্শন হলো, জীবন চক্রাকারে ঘোরে। আর সবকিছু একটি চক্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই আমার রক্ত আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমি আসলে কোথা থেকে এসেছি।’

সিরকা বেড়ে ওঠেন ফিলিপাইনের পান্তাবাংগান শহরে। এই শহরের ইতিহাস তুলে ধরতে ৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট প্রস্থের একটি ছবি এঁকেছেন তিনি। এখন সিরকা আরও বড় কাজ করতে চান। ২০২৩ সালে ৩২৮ ফুটের একটি ক্যানভাসে রক্ত দিয়ে ছবি আঁকবেন তিনি। তাঁর আশা, সেটি রক্ত দিয়ে আঁকা সবচেয়ে বড় ছবি হিসেবে বিশ্ব রেকর্ড করবে।