আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সংকটে

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের রাস্তায় নারীরা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এরই মধ্যে আবার দেশটিতে বেসরকারি সহায়তা সংস্থায় (এনজিও) নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও পক্ষ। জাতিসংঘ বলছে, তালেবানের এই পদক্ষেপের ফলে এরই মধ্যে আফগানিস্তানে চলমান তাদের অনেক জরুরি সহায়তা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আরও অনেক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধের পথে।

জাতিসংঘের কয়েকটি সহায়তা সংস্থা গতকাল বুধবার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, মানবিক সহায়তার সঙ্গে জড়িত নারীদের কাজে বাধা দেওয়ার ফলে শিগগিরই আফগানিস্তানের মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে অনেক জরুরি সহায়তা কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের কাজ করতে দিতে হবে।

ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কোনো দেশই তার অর্ধেক জনসংখ্যাকে সমাজে অবদান রাখা থেকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।

আরও পড়ুন

গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এর আগে থেকেই দেশটির আর্থিক অবস্থা ছিল নড়বড়ে। তালেবান সরকার গঠনের পর আফগানিস্তানের শত শত কোটি ডলার সম্পদ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। অনেক বিদেশি সংস্থাও দেশটিতে সহায়তা বন্ধ করে দেয়। এতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুরবস্থার মুখে পড়ে আফগানরা।

পরে ধীরে ধীরে আবার আফগানিস্তানে বিদেশি সহায়তা আসা শুরু করে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সেই সহায়তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে এসব সংস্থায় কাজ করা নারী কর্মীদের ওপর গত শনিবার নিষেধাজ্ঞা দেয় তালেবান।

এই নিষেধাজ্ঞার আগে গত সপ্তাহে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল তালেবান। গত মার্চ থেকে উচ্চবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এসব সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে আলাদা একটি বিবৃতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নারী সহায়তাকর্মীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলে, বেঁচে থাকতে বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর করে এমন কোটি কোটি আফগান ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

আরও পড়ুন

আফগানিস্তানের যেসব বেসরকারি সহায়তা সংস্থাগুলোয় নারীদের কাজে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিশ্চিয়ান এইড, একশনএইড, সেভ দ্য চিলড্রেন, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, কেয়ার ও ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কাউন্সিল। নিষেধাজ্ঞার পর এই সংস্থাগুলো দেশটিতে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে।

এতে শঙ্কিত শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-ও। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘মানবাধিকার ও মানুষের মৌলিক চাহিদাসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে রয়েছেন নারীরা। তারা যদি আফগানিস্তানে সহায়তা সরবরাহে অংশ না নিতে পারে, তাহলে বেসরকারি সংস্থাগুলো দেশটির সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের কাছে খাদ্য, ওষুধ, শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য জরুরি সেবা পৌঁছে দিতে পারবে না।’

সংকটে আফগানিস্তানের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্তও আফগানিস্তান শাসন করেছিল তালেবান। সে সময়ও নারীদের শিক্ষা গ্রহণের ওপর ব্যাপক হারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তারা। তবে গত বছর ক্ষমতায় আসার পর তালেবান বলেছিল, দেশ পরিচালনায় তারা অনেক নীতিতে পরিবর্তন আনবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালেবানের বর্তমান কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তারা সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

আর্থিক দুরবস্থার কারণে আফগানিস্তানের ৩০ থেকে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই সংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংগঠনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ করিম নাসিরি। আফগানিস্তানের টোলো নিউজের খবরে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে না যেতে পারলে আরও সংকটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা।

তবে রাজধানী কাবুলের দাওয়াত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের পড়াশোনার বিষয়ে এখনো ইতিবাচক আশাই করছেন। তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। শিগগিরই অবস্থার পরিবর্তন হবে। আর আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়াউল্লাহ হাশিমি বলেছেন, ‘আমরা আমাদের নীতিগুলো সহজ করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় এমন সমস্যাগুলো সমাধানে তাদের বিভিন্ন পরিষেবা দিচ্ছি।’