জাপানের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নতুন নেতা হিসেবে শিগেরু ইশিবাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে রক্ষণশীল এ দলের। তাই ইশিবাই জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নতুন দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমন এক সময় ইশিবা দলনেতার দায়িত্ব নিলেন, যখন বড় সংকটের মধ্যে রয়েছে এলডিপি। বিভিন্ন কেলেঙ্কারির জের ধরে দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে, নজিরবিহীনভাবে কমেছে জনপ্রিয়তা। এমনই এক পরিস্থিতিতে গত মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এরপর গতকাল শুক্রবার ভোটাভুটির মাধ্যমে ইশিবাকে নতুন নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
এলডিপির নেতা নির্বাচিত হন দলের অভ্যন্তরীণ ভোটে। এতে সাধারণ জনগণের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। এবারের ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছিলেন নয়জন প্রার্থী। শেষ পর্যন্ত ভোট দ্বিতীয় ধাপে গড়ায়। তাতে ৬৭ বছর বয়সী ইশিবা লড়াই করেন ৬৩ বছর বয়সী সানায়ে তাকাইচির বিরুদ্ধে। তাকাইচি জয়ী হলে তিনি হতেন জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
* এলডিপির নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন ইশিবা। দলটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
* ইশিবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১৩ মাসের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এলডিপির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর টোকিওতে দলের কার্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতায় ইশিবা বলেন, ‘সবাই যেন আবার হাসিমুখে জীবন যাপন করতে পারেন, এমন একটি নিরাপদ জাপান গড়ে তুলতে হলে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করতে হবে এবং সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে সত্যটা বলতে হবে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে বেশির ভাগ সময় ক্ষমতায় থেকেছে এলডিপি। আগামী মঙ্গলবার পার্লামেন্টের এক বিশেষ অধিবেশনের শিগেরু ইশিবাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। এর ১৩ মাসের মধ্যে জাপানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই অল্প সময়ে দেশে ও বিদেশে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে ইশিবাকে।
ইশিবার সামনে যত চ্যালেঞ্জ
ইশিবা এমন এক সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, যখন এ অঞ্চলে দিন দিন আগ্রাসী হয়ে উঠছে চীন। পশ্চিমা বলয়ের বিপরীতে অবস্থান করা রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে বেইজিং। এমনকি সম্প্রতি জাপানের দুটি দ্বীপের মধ্যে প্রবেশ করেছিল চীনের যুদ্ধজাহাজ।
এমন পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা–সংক্রান্ত হুমকিগুলো নিয়ে তৎপর থাকতে হবে ইশিবাকে। চীনকে সামাল দিতে জাপানের সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর মতো এশিয়াভিত্তিক একটি জোট গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে পারেন তিনি। একই সঙ্গে চীন–সংক্রান্ত মন্তব্য করার সময় সতর্ক থাকতে হবে তাঁকে।
সতর্কতার কথা বলা হচ্ছে কারণ, ইশিদা এলডিপির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায় তাঁর দেশ। কারণ, চীন ও জাপানের সম্পর্কের গভীর, দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল উন্নয়ন হলে তা দুই দেশের মানুষের মৌলিক স্বার্থগুলো রক্ষা করবে।
নিজ দেশে ইশিবাকে অর্থনীতিতে সুবাতাস ফেরাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের কারণে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের দাম পড়ে গেছে। যদিও ইশিবা দলনেতা নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন ১৪২ দশমিক ৯৪ ইয়েন পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে ১ ডলারে ১৪৬ দশমিক ৪৯ ইয়েন পাওয়া যাচ্ছিল। এ ছাড়া জাপানের গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইশিবা। দেশটির দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য একটি সরকারি সংস্থা গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া ইশিবার ওপর ভরসা রাখছেন অনেকে। এমনই একজন টোকিওর বাসিন্দা জুনকো তোমিনাগা। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘ইশিবা সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা রয়েছে। কারণ, তিনি যা মনে করেন, তা করে দেখানোর সাহস রয়েছে তাঁর। তবে প্রতিরক্ষার বিষয়ে ইশিবার নেতৃত্বে জাপান আরও ডানপন্থী হয়ে উঠুক, তা আমি চাই না।’