চীন–ফিলিপাইন যুদ্ধ নয়
পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর মালিকানা দাবি করছে চীন। এতে আপত্তি ফিলিপাইন, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের।
চীন ইতিমধ্যে তাদের দাবির সমর্থনে সাগরের মাঝখানে অনেক কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে এবং নৌবাহিনী পাঠিয়ে টহল দিচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষুব্ধ এ অঞ্চলের দেশগুলো। এ নিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনাও বাড়ছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর কর্মী ও চীনের উপকূলরক্ষীদের সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এ বিষয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র গতকাল রোববার বলেছেন, তাঁর দেশ যুদ্ধ বেধে যাওয়ার মতো কোনো উসকানি দেবে না এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এগোবে।
দক্ষিণ চীন সাগরের তদারকির দায়িত্বে থাকা ওয়েস্টার্ন কমান্ড ইউনিটের সৈন্যদের উদ্দেশে এক বক্তৃতায় মার্কোস বলেন, ‘দেশকে রক্ষায় আমরা সত্যিকারের ফিলিপিনো প্রকৃতির পথ অনুসরণ করব এবং এ ধরনের সমস্যাগুলো শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই।’
গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইন নৌ সেনা ও চীনের উপকূলরক্ষীদের মধ্যে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতে ফিলিপাইনের এক নাবিক আহত হন এবং নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফিলিপাইনের সামরিক বাহিনী জানায়, চীনের উপকূলরক্ষীরা তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় চীনের উপকূলরক্ষীদের হাতে ছুরি, বর্শা ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারা ফিলিপাইনের জাহাজে লুটপাট চালায় এবং নৌযান ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদে গত সোমবার চীনের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ফিলিপাইন।
তবে ফিলিপাইনের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র গত বৃহস্পতিবার বলেন, গৃহীত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল আইনানুগ, পেশাদার। এর জন্য কোনো নিন্দা গ্রহণযোগ্য নয়।
ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র তাঁর বক্তৃতায় চীনের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি তীব্র উসকানির মধ্যেও সংযম অনুশীলনের জন্য সৈন্যদের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর দেশ সর্বদা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে স্বাধীনতা ও অধিকার চর্চা করে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব পালনে আমরা বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শনের আশ্রয় নেব না অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে আঘাত বা ক্ষতি সাধন করব না। আমরা অটল থাকব।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমাদের শান্ত থাকাকে সম্মতি ধরে নেওয়ার ভুল করা ঠিক হবে না।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ফিলিপাইনের সঙ্গে তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তিও রয়েছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরে চীন ও ফিলিপাইনের এই দ্বৈরথ অত্যন্ত কৌশলগত এই নৌপথ ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্ভাব্য উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের কার্যক্রমের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ফিলিপাইনের সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের কোনো জাহাজ বা নৌযান আক্রমণের শিকার হলে তার সুরক্ষা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত শুক্রবার ফিলিপাইন জানায়, চীনের এই কর্মকাণ্ডের জন্য ওই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে এখানে যুক্ত করার কথা তারা ভাবছে না। চীনের এ আক্রমণকে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করলেও কোনো সামরিক হামলা বলে স্বীকার করেনি।
দক্ষিণ চীন সাগরের কৌশলগত পুরো সমুদ্রপথের ওপর মালিকানা দাবি করে আসছে চীন। এতে আপত্তি জানিয়ে আসছে ফিলিপাইন, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম। চীন তাদের দাবির সমর্থনে সাগরের মাঝখানে অনেক কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে এবং নৌবাহিনী পাঠিয়ে টহল দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা সীমানা বিরোধে কোনো পক্ষ নেয় না, কিন্তু সেখানে যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে, যেটিকে তারা নৌপথে চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষার অভিযান বলে বর্ণনা করে থাকে।
দক্ষিণ চীন সাগর একটি প্রধান সমুদ্রপথ। এই পথে বছরে তিন লাখ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। এর আগে ২০১৬ সালে হেগের স্থায়ী সালিসি আদালত জানিয়ে দেন, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের দাবির কোনো আইনি ভিত্তি নেই। তবে বেইজিং তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
চার দেশের যৌথ সামরিক মহড়া
ফিলিপাইন নিয়ে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই দিনের সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের ওয়েবসাইটে বলা হয়, অবাধ নৌযান চলাচল নিশ্চিতে সমুদ্রপথে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয় এই মহড়ার। এ মহড়ার মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারে এই চার দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়। মহড়ায় চারটি যুদ্ধজাহাজ অংশ নেয়।
এর আগে এপ্রিলে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নেয় ফিলিপাইন। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আচরণের অভিযোগ এনে এসব দেশের প্রতি ঝুঁকছে ম্যানিলা।