পান্ডার ছবি তুলতে ১২ বছর ধরে ‘প্রতিদিন’ চিড়িয়াখানায়
ভালো ছবি তুলতে আলোকচিত্রীদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কখনো কখনো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তবে যদি বলা হয়, কোনো আলোকচিত্রী একটি প্রাণীর ছবি তোলার জন্য ১২ বছর ধরে প্রায় প্রতিদিন একটি জায়গায় গেছেন, তাহলে বিস্মিত হওয়ার কথা।
বিস্মিত হওয়ার মতো এমন ঘটনাই ঘটেছে জাপানে। এ খবর জানিয়েছে এবিপি লাইভ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের ওই আলোকচিত্রীর নাম তাকাহিরো তাকাউজি। বয়স ৪৪ বছর। মূলত তিনি ওয়েব ডিজাইনার। তাকাউজি পান্ডার ছবি তুলতে ১২ বছর ধরে প্রায় প্রতিদিন রাজধানী টোকিওর চিড়িয়াখানা উয়েনো জুলজিক্যাল গার্ডেনে যেতেন। তাঁর বাড়ি সাইতামা শহরে। সেখান থেকে পাতালরেলের পথ ধরে চিড়িয়াখানায় পৌঁছাতে তাঁর সময় লাগত এক ঘণ্টা।
ঘটনাটি সামনে আসে জাপান থেকে চারটি পান্ডাকে চীনে ফেরত নেওয়ার প্রেক্ষাপটে। গতকাল মঙ্গলবার টোকিওর উয়েনো চিড়িয়াখানা থেকে ৫ বছর বয়সী মেয়ে পান্ডা জিয়াং জিয়াংকে চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ফেরত নেওয়া হয়।
তাকাহিরো জানান, সকাল ৯টায় চিড়িয়াখানাটি খুলত। তিনি এর দুই ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হতেন। পান্ডার ছবি তুলতে তাঁকে তিন থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়েছে।
তাকাহিরো ইতিমধ্যে পান্ডার ২০০টি ছবি নিয়ে নিজের ব্লগে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছেন। আর জিয়াং জিয়াংয়ের এক ছবি নিয়ে একটি প্রদর্শনী চলছে চিড়িয়াখানাটির কাছের একটি মলে। জিয়াং জিয়াং ও তাকাহিরোর মেয়ের বয়স প্রায় কাছাকাছি। এ জন্য এ পান্ডাটি তার কাছে ভীষণ প্রিয় ছিল। ইতিমধ্যে তিনি এ পান্ডাকে নিয়ে অনেক বই, ফটো অ্যালবাম, পোস্টকার্ড ও ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছেন। আর এসব থেকে উপার্জিত অর্থ পান্ডা রক্ষায় উয়েনো চিড়িয়াখানায় দান করে আসছেন।
তাকাহিরো জানান, ২০১১ সাল থেকে এক যুগে তিনি মাত্র ৩৪০ দিন চিড়িয়াখানায় যেতে পারেননি। কারণ চিড়িয়াখানার সাপ্তাহিক বন্ধ, নিজের মেয়ের জন্মদিন ও করোনাকালে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকা।
এএফপি জানায়, গত রোববার অন্য তিন পান্ডার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জিয়াং জিয়াংকে বিদায় জানায় জাপানিরা। এদিন লটারির মাধ্যমে ২ হাজার ৬০০ জন দর্শক এই জিয়াংকে দেখতে পেরেছেন। এ সময় অনেক দর্শনার্থীকে কাঁদতে দেখা গেছে। বলা হয়ে থাকে, উয়েনো চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ ছিল জিয়াং।
কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পান্ডা ধার দিয়ে থাকে চীন। তবে শর্ত দেওয়া থাকে, এসব পান্ডা ও এর শাবকেরা মালিকানা চীনেরই থাকবে। এ হিসাবে ২০১৭ সালে জাপানে জন্ম নেওয়া জিয়াং জিয়াংকেও ফিরতে হয়েছে চীনে। কারণ, এর পূর্বপুরুষকে চীন থেকে আনা হয়েছিল। ২০২১ সালে জিয়াংকে ফেরত নেওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়।