পাঁচবারের প্রচেষ্টায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ইশিবা
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত মাসে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর পর থেকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হতে পারেন, তা নিয়ে গুঞ্জনে মুখর ছিল জাপান। সেই গুঞ্জন শেষ হয়েছে। ফুমিও কিশিদার উত্তরসূরি নির্বাচিত হয়েছেন ইশিবা শিগেরু। পাঁচবারের প্রচেষ্টার পর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
অতীতে জাপানের প্রধান ক্ষমতাসীন উদার গণতন্ত্রী দল এলডিপির নেতৃত্ব পেছনের দরজার দেনদরবারের মধ্য দিয়ে বেছে নেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তবে একবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্ন থেকে নিজস্ব একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা দলের নেতৃত্ব ঠিক করে নিয়েছে। এ ব্যবস্থায় দলের সংসদ সদস্যরা ছাড়াও প্রায় ১০ লাখ চাঁদা প্রদানকারী সাধারণ সদস্য দলের নেতা নির্বাচনে ভোট দিতে সক্ষম। তবে এখনো দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রাধান্য বজায় রয়েছে। এর কারণ, উভয় পক্ষের ভোটের মূল্যমান সমান হওয়ায় সংসদ সদস্যদের সংখ্যাধিক্যের সমর্থন যে প্রার্থীর প্রতি থাকে, সেই প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফলে উপদলীয় বিভাজনে বিভক্ত এলডিপিতে যে উপদলের সংসদে প্রাধান্য বজায় থাকে, সেই উপদলের নেতা প্রায় সব সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।
বিগত বছরগুলোতে উপদলের প্রাধান্য ক্রমে হ্রাস পেতে থাকায় দলনেতার নির্বাচন আগের চাইতে অনেক বেশি উন্মুক্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে এ রকম পরিস্থিতি আগের চাইতে বেশি সংখ্যক প্রার্থীকে নেতৃত্বের নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্ররোচিত করছে। এবার মোট নয়জন প্রার্থী দলীয় সভাপতির নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। এ সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বেশি। প্রার্থীদের প্রায় সবাই জাপানের রাজনীতির পরিচিত মুখ হওয়ায় কে শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হন, আগে থেকে তা নিশ্চিতভাবে আঁচ করতে পারা কঠিন ছিল।
জাপানের সংবাদমাধ্যম শুরুতে যে তিনজন প্রার্থীকে ‘ফ্রন্ট রানার’ বা অগ্রবর্তী প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, সেই দলে ইশিবা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও অন্য দুজন পরবর্তী সময়ে ছিটকে পড়েন। সেখানে আবির্ভূত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কোইজুমি জুন-ইচিরোর পুত্র কোইজুমি শিনজিরো এবং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোর ঘনিষ্ঠ তাকাইচি সানায়ে। চূড়ান্ত লড়াই শেষ পর্যন্ত এই তিনজনের মধ্যে সীমিত ছিল এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকা তাকাইচির চাইতে একুশ ভোট বেশি পেয়ে শেষ পর্যন্ত দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন ইশিবা শিগেরু।
৬৭ বছর বয়সী ইশিবাকে জাপানের অনেকে স্কটল্যান্ডের অতীতের নেতা রবার্ট ব্রুসের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। এর পেছনে রয়েছে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার নির্বাচনে এর আগে পাঁচবার পরাজিত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তাঁর ফিরে আসা। ভোটের ফলাফল ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হাত তুলে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান এবং গভীর কৃতজ্ঞতা বোধের চিহ্ন হিসেবে বারবার মাথা নত করে ফলাফল মেনে নেন। এরপর দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইশিবা বলেছেন, জাপানকে এ রকম এক রাষ্ট্রে পরিণত করে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা তিনি করে যাবেন, সবাই যেখানে নিশ্চিত ও নিরাপদ পরিস্থিতিতে মুখে হাসি নিয়ে জীবন যাপন করতে পারবেন।
প্রতিরক্ষা নীতির বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেখা হয় ইশিবাকে। একসময় তিনি পশ্চিমা সাসরিক জোট ন্যাটোর একটি এশীয় সংস্করণ গড়ে তোলার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা জোটের সমর্থক হলেও তিনি জোটকে আরও বেশি সমতাপূর্ণ করে তুলতে আগ্রহী।
তাঁর জন্যও রয়েছে নানা রকম চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের দলীয় আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ। কেলেঙ্কারিতে সমালোচিত এলডিপির হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার বাইরে আরও আছে অর্থনৈতিক সমস্যার চক্র থেকে জাপানকে বের করে আনা এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কে তৈরি হওয়া জটিলতা থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারা। কতটা সফল তিনি হবেন, এর অনেকটাই নির্ভর করবে দলের ভেতরে নিজের সমর্থনের ভিত্তি শক্তিশালী করে নেওয়ার ওপর। এলডিপির নেতাদের মধ্যে জনসমর্থনের দিক থেকে ইশিবা অনেকাংশে এগিয়ে থাকলেও দলের ভেতরে, বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের মধ্যে তাঁর সমর্থন অনেকাংশেই দুর্বল।
দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর ইশিবাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের আগে সংসদের অনুমোদন পেতে হবে। সংসদে এলডিপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় ১ অক্টোবর উভয় কক্ষের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সেই অনুমোদন সংসদ যে প্রদান করবে, তা প্রায় নিশ্চিত। একই দিনে তিনি তাঁর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবেন এবং সম্রাটের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন লাভ করার পর দায়িত্ব পালন শুরু করবেন।জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত মাসে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর পর থেকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হতে পারেন, তা নিয়ে গুঞ্জনে মুখর ছিল জাপান। সেই গুঞ্জন শেষ হয়েছে। ফুমিও কিশিদার উত্তরসূরি নির্বাচিত হয়েছেন ইশিবা শিগেরু। পাঁচবারের প্রচেষ্টার পর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।