মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে বিমান হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর ওই হামলায় ইয়াক-১৩০ নামের বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়ার তৈরি এ বিমান স্থল হামলায় ব্যবহারের উপযোগী।
মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ করছে ‘মিয়ানমার উইটনেস’ নামের যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক একটি গ্রুপ। তারা বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ যাচাই করে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে সামরিক সরকার বিভিন্ন স্থানে আনগাইডেড রকেট ও ২৩ এমএম কামান ব্যবহার করেছে।
গ্রুপটি তার প্রতিবেদনে বলেছে, মিয়ানমারে (বিক্ষোভ দমনে) রাশিয়ার নির্মিত দুই আসনবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ইয়াক-১৩০ বিমান বারবার মোতায়েন করার বিষয়টি যাচাই করে দেখেছে মিয়ানমার উইটনেস। স্থলপথে আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা রয়েছে বিমানটির।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জামের বড় সরবরাহকারী হচ্ছে মস্কো। গত মাসের শুরুতেই অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আরও চুক্তি করতে রাশিয়া গিয়েছিলেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।
প্রতিবেদনটি গত শুক্রবার প্রকাশ করেছে মিয়ানমার উইটনেস। গ্রুপটি বলেছে, অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে বিশ্বাসযোগ্য নানা তথ্য ও বিমান হামলার স্থান সম্পর্কে জানা গেছে। তাতে দেখা গেছে, জনবহুল ও বেসামরিক বিভিন্ন এলাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ইয়াক-১৩০।
সাম্প্রতিকতম ঘটনাগুলোর একটি নিয়ে গত মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত একটি ইয়াক-১৩০ বিমান আকাশ থেকে ভূমিতে গোলা ছুড়ছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত একটি ইয়াক-১৩০ বিমান ১৮টির মতো আনগাইডেড রকেট ফেলছে।
বলা হচ্ছে, হামলাগুলো চালানো হয়েছে মিয়ানমারের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কারেন প্রদেশের মিয়াওয়াদি শহরের দক্ষিণে। ওই এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের সশস্ত্র কয়েকটি দল স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়ছে। এ ছাড়া দেশটিতে ক্ষমতাসীন জান্তার বিরুদ্ধে লড়তে বেসামরিক সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও নানাভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে তারা।
ওই ভিডিও দুটি কোন অঞ্চলে ধারণ করা হয়েছে, তা খুঁজে বের করেছে মিয়ানমার উইটনেস। তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, সেগুলো ধারণের স্থান থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির আরেকটি ঘটনারও সত্যতা যাচাই করেছে মিয়ানমার উইটনেস। সেবার মিয়ানমারের কায়াহ প্রদেশের লোইকাও শহরের পশ্চিমে অন্তত একটি ইয়াক-১৩০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালানো হয়। এ এলাকাও থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে।
মিয়ানমার উইটনেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যেসব গোষ্ঠীকে বিদ্রোহী হিসেবে দেখে, দাবি আদায়ে তারা নানা পন্থা অবলম্বন করছে। কিন্তু পুরোপুরি উল্টো পন্থা অবলম্বন করছে জান্তা। যেমন অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা, বিশেষ করে সেগুলোর সঙ্গে অন্যান্য সামরিক উড়োজাহাজের ব্যবহার।
সাম্প্রতিকতম ঘটনাগুলোর একটি নিয়ে গত মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, অন্তত একটি ইয়াক-১৩০ বিমান আকাশ থেকে ভূমিতে গোলা ছুড়ছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের নির্বাচিত অং সান সু চি সরকারকে হটিয়ে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এর পর থেকে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে দেশটি। ওই অভ্যুত্থানের জেরে মিয়ানমারজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। শক্ত হাতে এর জবাব দেওয়া শুরু করে সেনাবাহিনী।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য বলছে, মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর হামলায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আরও প্রায় ৭০ হাজার মানুষ।
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জামের বড় সরবরাহকারী হচ্ছে মস্কো। গত মাসের শুরুতেই অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আরও চুক্তি করতে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।
মিয়ানমারে যখন বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন দেশটিকে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২টি যুদ্ধবিমান দেয় রাশিয়া। মিয়ানমার উইটনেসের প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে সামরিক জান্তা ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশটিকে আরও ছয়টি যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেছে মস্কো।
জান্তার অধীন বাড়তে থাকা সহিংসতার মধ্যে চলতি বছরের মার্চে মিয়ানমারের বিমানবাহিনীর নতুন প্রধানসহ বেশ কয়েক সেনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। মিয়ানমারের বিমানবাহিনীকে যারা অস্ত্র সরবরাহ করছে, তাদেরও আনা হয়েছে নিষেধাজ্ঞার আওতায়।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বেসামরিক লোকজনের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থাও। দেশটির ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে তারা। মিয়ানমারের কাছে উড়োজাহাজের জ্বালানি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছে।