পাকিস্তানে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দুই খ্রিষ্টান পরিবারে হামলা
পাকিস্তানে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দুটি খ্রিষ্টান পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের সারগোদার জেলার মুজাহিদ কলোনিতে আজ শনিবার সকালে এ হামলা হয়েছে। হামলায় এখন পর্যন্ত কোনো নিহত ব্যক্তির খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সারগোদার জেলার পুলিশ কর্মকর্তা (ডিপিও) আসাদ আইজাজ মালহী দ্য ডনকে বলেন, ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে হামলার সূচনা হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। অভিযুক্ত এক ব্যক্তি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তবে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার কোনো প্রমাণ পুলিশ এখনো পায়নি। তদন্ত চলমান রয়েছে।
এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের ঘরের পাশে উন্মত্ত জনতাকে দেখতে পায়। পরে পুলিশ এলাকাটি ঘিরে ওই দুটি ঘর থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে কাজ করছে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি আনভেরিফাইড ভিডিওতে দেখা যায়, একজন রক্তাক্ত ব্যক্তি ও আরও কিছু মানুষকে ঘিরে রেখেছে উন্মত্ত জনতা। যাদের ঘিরে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন কিশোর-কিশোরীও রয়েছে। আরেকটি ভিডিওতে একটি ঘরের বাহিরে বড় ধরনের আগুন দেখা যায়। কিন্তু ডিপিও মালহী এসব ফুটেজকে ‘ভুয়া ভিডিও’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামলায় কেউ আহত হয়নি।
কিন্তু আহত এক ব্যক্তির এক আত্মীয় দ্য ডনকে বলেছেন, তাঁর চাচা গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে স্থানীয় খ্রিষ্টান নেতা আকমাল ভাট্টি বলেন, তারা (উন্মত্ত জনতা) একটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে এবং কয়েকজন খ্রিষ্টানকে পিটিয়েছে।
খ্রিষ্টান পরিবারের দুটি ঘর ও একটি জুতার দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।
জিও নিউজ জানায়, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা করার অভিযোগে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সারগোদার জেলার আঞ্চলিক পুলিশ কর্মকর্তা (আরপিও) শারিক কামাল সিদ্দিকী বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজের নির্দেশে প্রদেশের হোম অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি নূর-উল-আমিন মেনগাল ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রওয়ানা হয়ে গেছেন। তিনি কারণসহ পুরো ঘটনা তদন্ত করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক তিনি ঘটনাস্থলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবেন।
মেনগালকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান আমাদের সবার। ধর্মের নামে এখানে কোনো ধরনের অবিচার সহ্য করা হবে না।
সারগোদার জেলার ঘটনায় হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান (এইচআরসিপি) গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অবিলম্বে শান্তি ফেরাতে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং খ্রিষ্টান কমিউনিটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এইচআরসিপি।
পাঞ্জাব প্রদেশের জারানওয়ালা শহরে গত আগস্টে একটি খ্রিষ্টান মহল্লায় হামলা চালিয়েছিল একদল উন্মত্ত জনতা। তখন বেশ কিছু বাড়িঘর ও একাধিক গির্জায় আগুন দেওয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।