বিশ্লেষণ
তরুণ থাই নেতার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পরিণতি কী
থাইল্যান্ডের নির্বাচনে সামরিক জান্তাবিরোধী দল জিতলেও তাদের সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। কারণ, সেনাদের তৈরি সংবিধান আর তাদের অনুগত ২৫০ আসনের সিনেট।
বাংলাদেশের মানুষের আনন্দভ্রমণ আর ফুর্তির অন্যতম গন্তব্য থাইল্যান্ড। ফলে এই দেশ নিয়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষের আগ্রহ আছে। তবে সম্প্রতি সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে চেষ্টা চলছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের কুলীন সমাজে তেমন আগ্রহ নেই। গণমাধ্যমে খবরাখবরও তুলনামূলক কম। তবে রাজনীতি–সচেতন বাংলাদেশি মানুষের জন্য থাইল্যান্ডের ঘটনাবলি বেশ মনোযোগের দাবি রাখে।
৯ বছরের ব্যবধানে দুই মে মাস যেভাবে আলাদা
‘থাই’ শব্দের একটি অর্থ ‘মুক্ত’ হলেও থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ব্যবস্থা খুব বেশি মুক্ত নয়। এখানে সামাজিকভাবে শক্তিশালী রাজবংশ রয়েছে। পাশাপাশি আছে রাজনীতির প্রতি গভীরভাবে আগ্রহী সশস্ত্র বাহিনী। বেসামরিক আমলাতন্ত্রও দাপটের সঙ্গে চলে। এই তিনের বিপরীতে আছে একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য দেশের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম।
ঐতিহাসিকভাবে রাজপরিবার, জ্যেষ্ঠ জেনারেল এবং আমলারা মিলে থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা মোকাবিলা করে থাকেন। তারপরও সুযোগ পেলেই জনগণ ‘মুক্তি’র প্রত্যাশা জানিয়ে দেয়। সে রকম একটি ঘটনা ঘটল এবার। থাই জনগণ আবার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশটাকে ‘থাই (মুক্ত) ল্যান্ড’ বানাতে চাইল।
কিন্তু জনগণের এই রায় কত দিন টিকে থাকবে বা তার পরিণতি কী হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। থাইল্যান্ডে গত ৯০ বছরে প্রায় ২০টি সংবিধান তৈরি ও বাতিল হয়েছে। একই সময়ে ১৮ বার অভ্যুত্থান হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে মোট ২৮ দফা। দেশটিতে বেসামরিক শাসনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো শেষ করতে পারেনি স্থানীয় কুলীন সমাজ। থাইল্যান্ডে যেকোনো সংবিধানের বয়স গড়ে চার বছর বলে ধরা হয় এবং সেনা-অভ্যুত্থানের শঙ্কা নিয়ে সেখানে ভোর হয়। এই দেশে সর্বশেষ সেনা-অভ্যুত্থান হয়েছিল ২০১৪ সালের মে মাসে। ৯ বছর পরের একই মে মাসে থাই জনতা জানিয়ে দিল, তারা আজও গণতন্ত্রের পক্ষে।
পুরোনো শাসকদের বিরুদ্ধে ভোটবিপ্লব
সামরিক শাসনের মধ্যেই থাই জনগণকে আন্দোলনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নির্বাচন আদায় করতে হয়েছে। তবে নির্বাচিত বেসামরিক শাসনকে কখনোই বেশি দিন টিকতে দেওয়া হয়নি। এবারের নির্বাচনের পটভূমি তৈরি করেছে জনসমাজের তিনটি দাবি ঘিরে। সেগুলো হচ্ছে, রাজতন্ত্রের ক্ষমতার সংস্কার, সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানের সংস্কার এবং পরিপূর্ণ বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা। ১৪ মে বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন হলো। একই দিন তুরস্কের নির্বাচন থাকায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ বেশি ছিল সেদিকে।
২০১৪ সালের অভ্যুত্থানকারীদের তৈরি আইন ও সংবিধানের আলোকেই এবার নির্বাচন হয়েছে। থাই প্রতিনিধি পরিষদ ৫০০ সদস্যের। সেখানে সেনাবাহিনীর বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে ২৫০ আসনবিশিষ্ট সিনেট আছে। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের যৌথ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। নিয়মটা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী প্রভাবিত হয়। তাঁকে দুই পরিষদ মিলিয়ে ৩৭৬ সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতে হবে—এমন বাধ্যবাধকতা নেই। সশস্ত্র বাহিনীর আস্থার মানুষ হলেই চলবে।
জনগণ এই সংবিধান মানে না। তারপরও তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা বেশি ভোট দিয়েছে সংস্কারবাদী নতুন দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে (এমএফপি)। নির্বাচনে দলটি ৫০০ আসনের মধ্যে ১৫২টি পেয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রধান বিরোধী দল ফিউ থাই পার্টি পেয়েছে ১৪১ আসন। অর্থাৎ সরকারবিরোধী দুই দল মিলে পেল ২৯৩ আসন। অন্যদিকে জান্তাপ্রধান প্রায়ুত চান–ওচার থাই নেশন পার্টি পেল ৩৬ আসন। এর মাধ্যমে সামরিক, আমলাতন্ত্র ও রাজপরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় গত ৯ বছরের শাসকেরা প্রত্যাখ্যাত হলো। তবে এই নির্বাচনের মূল আকর্ষণ মোটেও সেটি নয়।
ভোট ও আসন বেশি নবীন ফরোয়ার্ড পার্টির
থাই রাজনীতির ইতিহাসে কমিউনিস্ট পার্টির পুরোনো ইতিহাসের বাইরে মূলধারার রাজনীতিবিদ হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় থাকসিন সিনাওয়াত্রা। একসময়কার প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সামরিক শাসকদের বৈরিতা ও বিচার এড়াতে ১৭ বছর ধরে নির্বাসনে। তাঁর দল বহুবার নিষিদ্ধ হয়েছে, আবার বহুবার নতুন নাম নিয়েছে। ২০১৪ সালে সর্বশেষ অভ্যুত্থানে তাঁর দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। তারপরও থাই রাজনীতিতে থাকসিন পরিবারের প্রভাব রয়ে গেছে। গত দুই দশক ধরে থাকসিনের দল যেকোনো নির্বাচনে প্রথম হয়েছে।
বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে বিশেষ পরিচিত উত্তর থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই অঞ্চল সিনাওয়াত্রাদের ঘাঁটি। ফিউ থাই পার্টির এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন থাকসিনের মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। নির্বাচনের আগে বেশির ভাগ জনমত জরিপ বলছিল, থাকসিনের দল বেশি আসন পাবে। কিন্তু নির্বাচনে বেশি ভোট পড়েছে ফরোয়ার্ড পার্টির পক্ষে। তারা পেয়েছে ৩৯ ভাগ ভোট, যা ফিউ থাই থেকে ১০ ভাগ বেশি এবং তৃতীয় স্থানে থাকা দল থেকে ২৬ শতাংশ বেশি।
রাষ্ট্র সংস্কার চায় তরুণেরা
নির্বাচনে ফরোয়ার্ড পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ থাইল্যান্ডের শাসকশ্রেণিকে যতটা হতাশ করেছে, তার চেয়ে বেশি বিপদে ফেলেছে দলটির রাজনৈতিক বক্তব্য। এই দল ও তার নেতা পিটার যেসব বক্তব্য জনসমাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেগুলো মোকাবিলা করা সহজ নয়।
কারণ, সেসব বক্তব্যের আবেদন থাই সমাজ, বিশেষ করে ব্যাংককের তরুণদের মনের গভীরে রয়েছে। ব্যাংককে তারা ৩৩ আসনের ৩২টিতেই জিতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। নতুন ভোটাররা এই দলকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছেন। এমনকি তরুণেরা তাঁদের অভিভাবকদের এই দলকে ভোট দিতে রাজি করিয়েছেন।
থাই তরুণদের স্বপ্ন ও চাওয়া একটি নতুন সংবিধান, যা রাজনীতি ও প্রশাসনে সেনা আধিপত্য কমাবে। পিটা তাঁদের সেই স্বপ্নের প্রতীক। কারণ, তিনিই এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফরোয়ার্ড পার্টির রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবে আছে, তারা দেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধির সেসব ধারা সংশোধন করবে, যেখানে বিশেষ ব্যক্তি ও বংশের সমালোচনাকে (রাজদ্রোহ!) ‘অপরাধ’ বলা আছে। যেমন অনুচ্ছেদ ১২ অনুযায়ী, রাজা–রানি ও তাঁদের উত্তরাধিকারের ‘সমালোচনা’র সাজা ৩ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড। এমনকি কোনো নাগরিক দেশের বাইরেও রাজপরিবারের সমালোচনা করতে পারবেন না। দেশে এনে তাঁদের বিচার করা যাবে।
ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে ফরোয়ার্ড পার্টি ও দলটির নেতা পিটা এসব সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও থাইল্যান্ডের শক্তিশালী আমলাতন্ত্র বহুভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে সুযোগ নানা আইনে আছে। এ ছাড়া যেকোনো সময় যেকোনো অজুহাতে সামরিক অভ্যুত্থানের ‘ঐতিহ্য’ তো আছে। সুতরাং নির্বাচনী ফল এশিয়াজুড়ে সংস্কারবাদীদের খুশি করলেও থাইল্যান্ডের ভেতরকার পুরোনো সংস্কারবাদীরা জানেন, এসব দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেক দুরূহ অবস্থার মুখোমুখি।
ভবিষ্যতের সঙ্গে অন্ধকার অতীতের সংঘাতের ইঙ্গিত
নির্বাচনে জয়ী ফরোয়ার্ড পার্টি এবং আরেক বিরোধী দল থাকসিনের ফিউ থাই পার্টি পারস্পরিক দূরত্ব ঘুচিয়ে একজোট হয়ে যে সরকার গঠন করবে, সেটি সহজ নয়। কারণ, সামরিক বাহিনী তাদের অনুগত (অনির্বাচিত) ২৫০ সিনেট সদস্য দিয়ে নতুন সরকার বাছাই করতে পারে। ২৫০ সিনেট সদস্যের বাইরে মাত্র ১২৬ নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কাছে টানতে পারলে তারা নিজেদের পছন্দে কাউকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারবে।
রাজতন্ত্র, আমলাতন্ত্র ও সেনা–সমর্থিত কোনো দল বেশি আসন না পেলেও অনেক ছোট দল কিছু কিছু আসন নিয়ে পার্লামেন্টে আছে। সেনাবাহিনী এদের এক ছাতার নিচে টেনে আনার চেষ্টা চালাবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরও এমন ঘটেছিল। সেবার সিনাওয়াত্রার দল ১৩৬ আসনে জিতে প্রধান দল ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী সিনেটকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী করে প্রায়ুত চান–ওচাকে। অথচ তাঁর দল আসন পেয়েছিল ১১৬টি।
এমন ঘটনা এবারও ঘটলে ফরোয়ার্ড পার্টির পক্ষে সরকার গঠন বা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। এমনকি ফিউ থাইয়ের সমর্থন থাকলেও লাভ হবে না। আবার ফিউ থাই থাকসিনকে দেশে আনতে সেনাবাহিনীর পছন্দের দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে।
ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টি ছাড়াও সেনা–প্রভাবিত আরেকটি দল হচ্ছে পালাং প্রাচারত পার্টি। এ দলের নেতা প্রাউইত অংসুওয়ান। দলটি ৪০টি আসন পেয়েছে। এই দুই দলে মোট আসন ৭৬। দুই দলের প্রধান যথাক্রমে প্রায়ুত ও প্রাউইত সাবেক সেনাপ্রধান। এই দুজনের দলের নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে সিনেটের ২৫০ আসন যোগ করলে সেনাবাহিনীর হাতে এখনই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩২৬ আসন আছে। নিজেদের কাউকে প্রধানমন্ত্রী করতে আরও ৫০ জনপ্রতিনিধির সমর্থন লাগবে।
অন্যদিকে ফরোয়ার্ড পার্টি ও ফিউ থাইয়ের লাগবে (১৫২+১৪১=২৯৩) অনেক বেশি। এই দুই দল ইতিমধ্যে ছোট আরও চারটি দলের সঙ্গে জোট করেছে। তাতে সংসদে তাদের আরও ২০ সমর্থক বাড়বে। কিন্তু জোটের কারও প্রধানমন্ত্রী হতে আরও ৫০-৫৫ জনের সমর্থন লাগবে। থাইল্যান্ডের রাজনীতি এখন ঠিক এই অঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে।
বোঝাই যাচ্ছে, দারুণ একটা নির্বাচনের পরও পরিস্থিতি গণতন্ত্রপন্থীদের জন্য নিশ্চিত ভরসার নয়। তারপরও দেশের তরুণ-তরুণীরা পরিবর্তনের জন্য মরিয়া। তাঁদের একদিকে রয়েছে পিটা লিমজারোয়েনরাত ও পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা নামের দুই তরুণ চরিত্র। অন্যদিকে আছে কাছাকাছি আদর্শের প্রায়ুত ও প্রাউইত নামের দুই বৃদ্ধ জেনারেল। প্রায়ুত এখনো প্রধানমন্ত্রী। থাই রাজনীতির এই মেরুকরণ কেবল তারুণ্যের সঙ্গে বার্ধক্যের দ্বন্দ্বের প্রতীকী রূপ নয়, ভবিষ্যতের সঙ্গে অন্ধকার অতীতের সংঘাতেরও ইঙ্গিত বটে। মধ্যপন্থী দল ভূমযাইথাই ৭০টি আসন পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এরাই এই মুহূর্তে সরকার গঠনে নির্ধারক ভূমিকা রাখবে।
ফল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক
থাইল্যান্ডে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত মানুষের একটি দুর্ভাগ্যের দিক হলো, বর্তমান বিশ্বের প্রধান দুই মুরব্বি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র—কোনো দেশই থাইল্যান্ডের ভেতরকার কুলীনদের রাজনৈতিক অনাচারে ভবিষ্যতেও শক্ত কোনো আপত্তি তুলবে বলে মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাই শাসকদের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি সামরিক জান্তাদের আমলেও ভেঙে পড়েনি।
তবে সামরিক সরকারের অধীনে গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক বিষয়ে থাইল্যান্ডের প্রত্যাশিত সহযোগিতা পায়নি। তা ছাড়া এবার ফরোয়ার্ড পার্টি যে তরুণ সমাজের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তাঁদের বড় অংশ মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থীদের সমর্থক। একই সঙ্গে তাঁরা হংকং ও তাইওয়ানের চীনবিরোধী জনমতের প্রতিও সহানুভূতিশীল। সুতরাং সমর্থকভিত্তির কারণেই ফরোয়ার্ড পার্টির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রমুখী থাকতে পারে।
পিটা নির্বাচনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের সঙ্গে থাইল্যান্ডের একটা মানবিক করিডর গড়ে তোলার ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্মা অ্যাক্ট’-এরও একজন সমর্থক। অন্যদিকে ফিউ থাই পার্টি রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের বিরোধী। এসব প্রবণতা থেকে মনে হচ্ছে, সর্বশেষ নির্বাচনে ভালো করা প্রধান দুই দলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র–ইউরোপের পক্ষপাত থাকবে।
তবে এমন নীরব পক্ষপাতের পরও ভুলে গেলে চলবে না, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্যবাদের বিজয় ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬০ ও ১৯৭০–এর দশকে থাইল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীকে কমিউনিস্টবিরোধী ‘কাউন্টার ইন্টারজেন্সি’তে অন্ধ সমর্থন দিয়েছিল। বিশেষভাবে ফিল্ড মার্শাল থানম কিট্টিকাচ্চরণ ও তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাপাস চারুসাথিয়েনর হাতে ১৯৭১ সালে দেশটির প্রায় ১০ হাজার বামপন্থী সংগঠক বিনা বিচারে খুন হন।
মারার পর রাজনৈতিক কর্মীদের পুড়িয়ে ফেলা হতো, যাতে কোনো চিহ্ন না থাকে। থাই ইতিহাসে এই পদ্ধতি ‘রেড-ড্রাম কিলিং’ নামে কুখ্যাত হয়ে আছে। ওয়াশিংটনের সহায়তায় থাইল্যান্ডে তখন গড়ে উঠেছিল ‘কমিউনিস্ট সাপ্রেশন অপারেশন কমান্ড’ বা সিএসওসি। বলা বাহুল্য, আজ থাই তরুণেরা যখন পরিবর্তনের জন্য লড়ছেন, তখন তাঁরা আসলে বেদনাময় সেই অতীত থেকেও বের হওয়ার চেষ্টা করছেন।
আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক