চলমান বিক্ষোভ সি চিন পিংয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
চীনে ভিন্নমতের প্রকাশ বা সরকারের বিরোধিতা করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। কয়েক বছর ধরেই পরিবেশের ক্ষতিকর দূষণ থেকে শুরু করে অবৈধভাবে ভূমি দখল কিংবা পুলিশের হাতে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষের নির্যাতনের শিকার হওয়া—এ রকম নানা ইস্যুতে হঠাৎ হঠাৎ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ঘটনা ঘটছে।
তবে চীনের নাগরিকদের এবারের প্রতিবাদ, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের তাৎপর্য ভিন্ন। এই মুহূর্তে তাঁদের মনে একটিই বিষয়। আর এ নিয়ে ক্রমে ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে তাঁদের মধ্যে; যা সরকারের ‘শূন্য করোনা’ নীতির আওতায় আরোপিত বিধিনিষেধের জন্য এক বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশের শুরুর দিকে চীনের বাসিন্দারা করোনার অন্যতম বিধিনিষেধ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি অমান্য করতে থাকেন। আর এখন বিভিন্ন শহরের রাস্তায় ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে তাঁরা বিক্ষোভে নেমেছেন। এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে।
চীনের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও সবচেয়ে জনবহুল শহর সাংহাইয়ের রাস্তায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পদত্যাগের দাবিতে প্রকাশ্যে স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। এই স্লোগান শোনা ক্ষমতাসীনদের জন্য কতটা পীড়াদায়ক, তা এখনই ব্যাখ্যা করা একরকম কঠিন।
ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে খোলাখুলি সমালোচনা করা চীনে খুবই বিপজ্জনক। এভাবে সমালোচনা করলে কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। তবু বিক্ষোভকারীরা সাংহাইয়ের সড়ক ছাড়ছেন না।
গত বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের রাজধানী উরুমকির এক অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের ভবনে আটকে পড়া ও উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার জন্য করোনার বিধিনিষেধকে দায়ী করা হচ্ছে।
দৃশ্যত, ক্ষমতাসীন সি সরকার তার শূন্য কোভিড নীতির ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান গণ-অসন্তোষকে ভীষণভাবে খাটো করে দেখেছে। এটি এমন একটি নীতি, যেটির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সম্প্রতি এ নীতি থেকে সরে না আসার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
করোনার বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সাংহাই শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। তাঁদের অনেককে পুলিশের গাড়িতে তুলতে দেখা গেছে। রাজধানী বেইজিং ও নানজিং শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সাংহাইয়ের রাস্তায় এক বিক্ষোভকারী স্লোগান তুলছিলেন, ‘সি চিন পিং!’ পরক্ষণে শত শত মানুষ সমস্বরে চিৎকার করে জবাব দেন, ‘স্টেপ ডাউন (পদত্যাগ)!’ এরপর একই স্লোগান ও একই জবাব উচ্চারিত হতে থাকে বারবার।
বিক্ষোভকারীরা এ-ও স্লোগান দেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টি! স্টেপ ডাউন! কমিউনিস্ট পার্টি! স্টেপ ডাউন!’
বিক্ষোভরত অনেকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। সাংহাইয়ের একজন বলেন, চীনে মানুষের মধ্যে এমন অসন্তোষ আগে তিনি কখনো দেখেননি। করোনার লকডাউনের কারণে তিনি খুবই কষ্টে রয়েছেন। এমনকি তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত মাকেও দেখতে যেতে পারেননি। আরেকজন অভিযোগ করেন, বিক্ষোভ করার কারণে তাঁকে পুলিশ মারধর করেছে।
যাদের কাছে ক্ষমতায় থাকার চেয়ে বেশি অগ্রাধিকারমূলক বিষয় নেই, এমন একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এ বিক্ষোভ ক্ষমতায় টিকে থাকার মতোই বড় চ্যালেঞ্জ।
দৃশ্যত, সরকার তার শূন্য কোভিড নীতির ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান গণ-অসন্তোষকে ভীষণভাবে খাটো করে দেখেছে। এটি এমন একটি নীতি, যেটির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সম্প্রতি এ নীতি থেকে সরে না আসার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র সাংহাইয়ের রাস্তায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পদত্যাগের দাবিতে প্রকাশ্যে স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। এই স্লোগান শোনা ক্ষমতাসীনদের জন্য কতটা পীড়াদায়ক, তা এখনই ব্যাখ্যা করা একরকম কঠিন।
তা ছাড়া চীনের ক্ষমতাসীন দল কার্যত যে কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেদের আটকে ফেলেছে, তা থেকে সহজে বেরিয়ে আসার পথ নেই।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রায় তিন বছর পর চীন আবারও সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালে আরও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) তৈরি ও করোনার টিকাদানের বিষয়ে জোর দেওয়ার বদলে তারা গণহারে পরীক্ষা, লকডাউন ও আইসোলেশনের মতো পদক্ষেপে বিপুল অর্থ ও শ্রম ব্যয় করছে। এসবের লক্ষ্য, এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া। কিন্তু ভাইরাসটি চীনকে ছাড়ছে না।
চীনে গত বুধবার করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) রেকর্ডসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন; যা প্রায় তিন বছর আগে দেশটিতে এ মহামারি শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ। এ দিন ৩১ হাজার ৪৪৪ জন রোগী শনাক্ত হন। এই হিসাবে দেশের বাইরে থেকে আসা রোগীদের ধরা হয়নি।