জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশ: ১২০০ কোটি ডলার প্রয়োজন বছরে

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলছে কপ ২৯ জলবায়ু সম্মেলনছবি: এএফপি

জলবায়ু সংকটে চরম ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের চাহিদা বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা)। বছরের পর বছর বাংলাদেশকে যে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা পূরণ ও পরিচ্ছন্ন শক্তি জোগানে এই অর্থ প্রয়োজন। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ ২৯–এর আসরে গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

পরিবেশের কারণে বাংলাদেশকে অস্বাভাবিক বন্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বন্যায় প্লাবিত চিরায়ত এলাকাগুলো ছাড়াও এবার প্লাবিত হয়েছে নোয়াখালী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। এ বছরে ছয়টি বন্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, এসব হচ্ছে জলবায়ু সংকটের কারণে। শুধু বন্যার কারণেই এ বছর দেশের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সোয়া বিলিয়ন ডলার।

প্রেস সচিব বলেন, জলবায়ুর কারণে বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে ১২ বিলিয়ন ডলার। অথচ অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ পাচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। এর বাইরে ঋণ পাচ্ছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার।

এই ভয়ংকর অবস্থা ও তার নিরসনে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের কথাই তাঁরা বাকুতে তুলে ধরছেন।

প্রেস সচিব জানান, দেশের ২৯টি এনজিও ও নাগরিক সমাজের সংগঠনকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন দেশের এই ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে আরও বেশি অর্থ সাহায্য পাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে। প্রধান উপদেষ্টা চান, সম্মেলন শেষে যে ঘোষণাপত্র গৃহীত হবে, তাতে বাংলাদেশের উদ্বেগ ও চাহিদা যেন জায়গা পায়।

বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ছবি: পিআইডি

বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

এদিকে বাসস জানায়, কপ ২৯ জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সাক্ষাৎ হয়েছে। এ সময় তাঁরা জলবায়ু সংকট সমাধানের উপায় এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে তুরস্ক ও আমিরাতের প্রেসিডেন্টসহ ২০ জন বিশ্বনেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় তাঁরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানান।’

প্রধান উপদেষ্টাকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানান সে দেশের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় ড. ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

বাকুতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। পাশে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম
ছবি: পিআইডি

ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিককে মুক্তি দেওয়ায় আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

গতকাল জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আড্ডো, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইদি রামা, নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পোডেল, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে।

সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় যুব উৎসবে যোগ দিতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।

ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মিসরের আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমেদ আল-তাইয়েবও। এ সময় হাজার বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদানের

জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান গ্র্যান্ড ইমাম। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ’ ঘোষণা করবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঋণ একটি মানবাধিকার। কারণ, এটি মানুষের জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। গতকাল বাকুতে কপ ২৯-এর ফাঁকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

সম্মেলনের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে ‘আ গ্লোবাল কনভারসেশন: অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স ফর স্মল স্কেল ফারমার্স’ শিরোনামের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আজ বুধবার কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ ২৯)-এর ‘ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট’–এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল এ কথা জানিয়েছেন।