বিতর্কের মধ্যেই জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন
ফুলেল শ্রদ্ধা, প্রার্থনা আর ১৯টি তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে অন্তিম বিদায় জানিয়েছে জাপান। আজ মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসসহ প্রায় ৭০০ বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এত বেশি খরচ করা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থলের কাছে জড়ো হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরাও। খবর রয়টার্সের।
গত ৮ জুলাই জাপানের নারা শহরে এক রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় এক বন্দুকধারীর গুলিতে শিনজো আবে নিহত হন। এরপর পারিবারিকভাবে তাঁর দাহ সম্পন্ন হয়। আজ আয়োজন করা হয় রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার।
জাপানের স্থানীয় সময় বেলা দুইটায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায়) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মোটরশোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে আবের দেহভস্মভর্তি বাক্স নিয়ে তাঁর স্ত্রী আকি আবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াস্থলে পৌঁছান। তিনি নিপ্পন বুদোকান হলে ঢোকার সময় ১৯ বার তোপধ্বনি করা হয়।
আজ বুদোকান হলের ভেতরের বেদিতে বিভিন্ন রঙের ফুলের ওপর আবের একটি বড় প্রতিকৃতি ঝুলিয়ে রাখা হয়। প্রতিকৃতিতে জড়ানো হয় কালো রঙের ফিতা। পাশের একটি দেয়ালে সাঁটানো হয় তাঁর আরও কিছু ছবি।
অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে আবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণের নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আবের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।
জাপানে প্রয়াত কোনো প্রধানমন্ত্রীর জন্য শেষবারের মতো রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। তখন শিগেরু ইয়োশিদার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ১ কোটি ১৫ লাখ ডলার পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে জাপান সরকার। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে এত বেশি খরচ করার প্রতিবাদে কিছুদিন ধরে জাপানে বিক্ষোভ চলছে।
আজ নিপ্পন বুদোকান হলে যখন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলছিল, তখনো টোকিওর উপকণ্ঠের একটি এলাকায় বিক্ষোভকারীরাও জড়ো হয়েছিলেন। ‘কোনো রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নয়’ বলে স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা।
তবে বিক্ষোভ হলেও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান শোকাহত হাজারো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানস্থলের কাছে ভিড় জমাতে শুরু করেন তাঁরা। এমন অবস্থায় সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগেই আয়োজকেরা নিপ্পন বুদোকান হলের গেট খুলে দিতে বাধ্য হন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আবের ছবির সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং নীরবে প্রার্থনা করেছেন।
ইয়োশিকো কোজিমা নামে ৬৩ বছর বয়সী এক নারী বলেন, ‘আমি জানি এ অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেক মানুষ এর বিরুদ্ধে। তবে অনেক মানুষ আবার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আমার এখন মনে হয়, সত্যিই যখন এ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছে, তখন অনেক মানুষই তাঁর জন্য প্রার্থনা করবেন।’
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে সাবেক ও বর্তমান ৪৮ বিশ্বনেতাসহ প্রায় ৪ হাজার ৩০০ মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনকে ঘিরে আশপাশের সড়কে প্রায় ২০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। নিরাপত্তা বিবেচনায় কিছু স্কুলও বন্ধ রাখা হয়েছিল।