এভারেস্টের বেজক্যাম্প আপাতত সরাবে না নেপাল
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বেজক্যাম্প আরও নিচে সরিয়ে আনতে গত জুনে একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়। তবে এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে শেরপা সম্প্রদায় ও পর্বতারোহণ পরিচালনাকারীরা। বিরোধিতার মুখে পরিকল্পনাটি শিগগিরই বাস্তবায়নের পথ থেকে সরে এসেছে নেপাল সরকার।
আজ সোমবার বিবিসির খবরে জানানো হয়, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নেপালের নবনিযুক্ত পর্যটনমন্ত্রী সুদান কিরাতি বলেছেন, এভারেস্টের বেজক্যাম্প আরেকটু নিচে সরিয়ে আনার বিষয়টি জরুরি কিছু নয়। তাই আপাতত এর বাস্তবায়ন করা হবে না।
কুম্বু হিমবাহের ওপর এভারেস্টের বেজক্যাম্পের অবস্থান। হিমবাহটি দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে বেজক্যাম্প। ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিবছর বেজক্যাম্পে যাওয়া শত শত পর্বতারোহীর।
নেপাল সরকারের ভাষ্য, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও অনেক বেশি মানুষের উপস্থিতির কারণে এভারেস্টের বেজক্যাম্প ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই এটা এখন যেখানে আছে, সেখান থেকে সরিয়ে আরেকটু নিচে নামিয়ে আনা হবে।
গত জুন মাসে এ পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে নানা মহলের বিরোধিতা শুরু হয়। নেপালের পর্বত অভিযান শিল্পে শেরপাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই পর্বত আরোহণ–সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শেরপা নেতারা বলছেন, এটা অযৌক্তিক একটি পরিকল্পনা।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও নেপাল পর্বতারোহণ সমিতি বলছে, ৯৫ শতাংশ শেরপা সরকারের এ পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নন। তাই পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন থেকে সরে আসা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা এখনো চলছে। বিকল্প উপায় খোঁজা হচ্ছে।
কুম্বুর চেয়ারম্যান মিংমা শেরপা বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ে এমন একজন ব্যক্তিকেও খুঁজে পাইনি, যে এভারেস্টের বেজক্যাম্প সরানোর পরিকল্পনা সমর্থন করে। তাই অদূর ভবিষ্যতে বেজক্যাম্প এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।’
নেপাল ন্যাশনাল মাউন্টেন গাইডেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আং নরবু শেরপা প্রশ্ন রাখেন, সাত দশক ধরে বেজক্যাম্প এই জায়গায় রয়েছে। এখন কেন এটা সরাতে হবে? আর যদি সরাতেই হয়, তাহলে এর কার্যকর বিকল্প নিয়ে গবেষণা কোথায়?
বর্তমানে এভারেস্টের বেজক্যাম্প ১৭ হাজার ৫৯৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। নতুন যে বেজক্যাম্পটির কথা ভাবা হচ্ছিল, তার অবস্থান এর ৬৫৬ থেকে ১ হাজার ৩১২ ফুট নিচে।
যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখান, এভারেস্টের বেজক্যাম্পের কাছের হিমবাহের ঘনত্ব প্রতিবছর ১ মিটার করে পাতলা হচ্ছে। হিমবাহের বেশির ভাগ অংশ পাথুরে অংশে আবৃত, তবে উন্মুক্ত বরফের এলাকাও রয়েছে, যাকে ‘আইস ক্লিফ’ বলা হয়।
আইস ক্লিফগুলো গলে হিমবাহকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে বলে জানিয়েছেন স্কট ওয়াটসন নামের একজন গবেষক।