দক্ষিণ কোরিয়া পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে জাপান

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসনের দাবিতে সিউলের রাজপথে বিক্ষোভ। সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া, ০৪ ডিসেম্বরছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়াকে জাপানের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল ২০২২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আগের প্রশাসনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাপানের আচরণ এবং সেই ইতিহাসের সঠিক স্বীকৃতি নিয়ে দুই দেশের অবস্থানগত পার্থক্যকে কেন্দ্র করে জটিলতা দেখা দেয়। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক অনেকটা শীতল হয়ে গিয়েছিল। এমনকি দুই দেশ শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনাও স্থগিত রেখেছিল।

২০২২ সালের নির্বাচনে ইউন জয়লাভ করায় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার পথে এগিয়ে যায় জাপান। গত দুই বছরে সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ আকার নেয়। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ করে দেখা দেওয়া অস্থিরতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব না ফেললেও সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ জাপানে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইউনের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দেখা দেওয়া জটিলতা এবং এর ফলশ্রুতিতে লোকজনের পথে নেমে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির ঘোষণা বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অনেক বেশি জটিল করে তুলেছে। পার্লামেন্ট সদস্যরা দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের বাইরে প্রেসিডেন্টের অভিশংসন নিয়ে উত্থাপিত একটি বিল স্পিকারের কাছে দাখিল করেছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিলটির ওপর ভোট গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সহজেই সেটা কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে অভিশংসন বিল পাস করিয়ে নিতে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন দরকার হওয়ায় কিছুটা জটিলতা হয়তো দেখা দেবে। বিরোধী সব কয়টি দলের সম্মিলিত আসনসংখ্যা দুই–তৃতীয়াংশের চেয়ে আটটি কম। ফলে প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের নিজের দলের কিছু সদস্য অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবে কি না, তার ওপর নির্ভর করবে প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ।

তবে তা সত্ত্বেও নিজের গ্রহণ করা সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে অনিশ্চিত যে পরিস্থিতির মুখে এখন ইউন পড়েছেন, রাজনীতির সেই কানাগলি থেকে বের হয়ে আসা তাঁর পক্ষে হয়তো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন ক্ষমতার আরও একটি রদবদল মনে হয় আসন্ন। দেশের সেই পথে অগ্রসর হওয়া নিয়ে মিত্ররা এ কারণে অনেকটা উদ্বিগ্ন। কারণ, পূর্ব এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখার নামে তারা যে মৈত্রী জোট গড়ে তুলেছে, সেটা হয়তো ভাঙনের পথে না গেলেও কিছুটা শিথিল আকার ধারণ করবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই পরিস্থিতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর কতটা এবং কোন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা নির্ধারণ করার জন্য পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে জাপান।

জাপানের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট ইউনের জারি করা সামরিক শাসন তাদের অবাক করে দিয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তার ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখছেন তাঁরা।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরু বলেছেন, ‘সরকার গভীর উদ্বেগ নিয়ে’ ঘটনার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ইউনের সঙ্গে কিছুদিন আগে জানুয়ারি মাসে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

জাপানের কর্মকর্তারা আগামী মাসে ইশিবার সিউল সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছিলেন। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে তিনি যাবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ইশিবা বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কিছু এখনো ঠিক করা হয়নি।’

এদিকে জাপানের সংসদ সদস্যদের একটি দল অবশ্য ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া সফরের একটি কর্মসূচি স্থগিত করে দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুগা ইয়োশিহিদের নেতৃত্বে সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত দলটি দুই দেশের সম্পর্ক আরও বেশি আন্তরিকতা পূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে সফরের সময় সূচি নির্ধারণ করেছিল।

আরও পড়ুন

সরকারের পাশাপাশি জাপানের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীও দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে দেখা দেওয়া উদ্বেগ থেকে ঘটনাবলির ওপর নজর রাখছে। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক জাপানি নাগরিক দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যান। এসব সফর আয়োজন করা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিও জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে যাচ্ছে। জাপানের যেসব নাগরিক এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছেন, তাঁদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা সরকার বিবেচনা করে দেখছে।

প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে তার সরকার। ফলে আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় এখন জাপান সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করতে আগ্রহী সাধারণ নাগরিকেরাও রয়েছেন।

আরও পড়ুন