মিয়ানমারে জান্তার অস্ত্র তৈরি হচ্ছে পশ্চিমা উপকরণে
ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার অন্তত ১৩টি দেশের কোম্পানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মিয়ানমারকে অস্ত্র তৈরির উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। এসব উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিয়ানমারের জান্তা–সরকার নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র কারখানায় দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। মিয়ানমারবিষয়ক বিশ্লেষকদের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমারের (এসএসি–এম) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
অভিযোগ রয়েছে, পশ্চিমাদের সরবরাহ করা উপকরণ ও প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা এসব অস্ত্র মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটিতে চলমান সেনা–সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করছে।
বিক্ষোভ দমনে ব্যবহৃত অস্ত্র তৈরির পেছনে এমন কিছু দেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে, যারা জান্তার কঠোর দমনপীড়ন এবং সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা প্রতিহত করার বিষয়ে নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করে, এটা দুঃখজনক।জেরার্ড ম্যাককার্থি, সহকারী অধ্যাপক, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজ।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে তুমুল বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জান্তা সরকার। দেশটিতে জান্তার দমন–পীড়নে ২ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আটক হয়েছেন ১৭ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী। এর পরিপ্রেক্ষিতে জান্তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত করছেন আন্তর্জাতিক আদালত।
অস্ত্র তৈরির উপকরণ সরবরাহের তথ্য ও বিভিন্ন সময় ফাঁস হওয়া তথ্য বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এসএসি–এম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত ডিরেক্টরেট অব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজে (ডিডিআই) অস্ত্র তৈরির উপকরণ, প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ সরবরাহ করছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীন, ভারত, অস্ট্রিয়া, সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল, ইউক্রেন, জার্মানি, জাপান, তাইওয়ান, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারকে বন্দুকের ব্যারেল তৈরির জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক মেশিন সরবরাহ করছে অস্ট্রিয়ার কোম্পানি জিএফএম স্টেয়ার। ফরাসি কোম্পানি দাসল্ট সিস্টেমস ও জার্মানির সিমেন্স ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিজ অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সফটওয়্যার সরবরাহ করছে। এসব কোম্পানি সরাসরি, নয়তো তৃতীয় পক্ষের কোম্পানির মাধ্যমে ওই উপকরণ ও প্রযুক্তি দিচ্ছে মিয়ানমারকে। এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সাবেক প্রতিনিধি এবং এসএসি–এম–এর প্রতিষ্ঠাতা ইয়াংঘি লি বলেন, ডিডিআই সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে তৈরি করা অস্ত্র মিয়ানমার সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যায় ব্যবহার করে থাকে। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানি ডিডিআই ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এখনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক জেরার্ড ম্যাককার্থি বলেন, বিক্ষোভ দমনে ব্যবহৃত অস্ত্র তৈরির পেছনে এমন কিছু দেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে, যারা জান্তার কঠোর দমনপীড়ন এবং সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা প্রতিহত করার বিষয়ে নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করে, এটা দুঃখজনক।
জেরার্ড ম্যাককার্থি আরও বলেন, এটা পশ্চিমাদের ভণ্ডামি। তাঁরা একদিকে গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলছে, অন্যদিকে মিয়ানমারের জান্তার জন্য অস্ত্র তৈরিতে উপকরণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। মিয়ানমার ইস্যুতে যেসব দেশ নিরপেক্ষতার নীতি নিয়েছে, তাদের অনেকেই দেশটির স্বৈরশাসকের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করেনি।