২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সাক্ষাৎকারে সাবেক মার্কিন দূত

চীনকে মোকাবিলা নয়, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক স্কট মারসিয়েল
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

সাবেক কূটনীতিক স্কট মারসিয়েল ১৯৮৫ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগ দেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর হ্যানয়ে নিযুক্ত প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রদূত তিনি। কাজের সূত্রে তিনি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ঘুরেছেন। ফিলিপাইনের পিপল পাওয়ার বিদ্রোহ থেকে শুরু করে থাইল্যান্ডের অভ্যুত্থান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি। ২০২২ সালে মারসিয়েল অবসর নেন। বর্তমানে তিনি স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াল্টার এইচ শোরেনস্টেইন এশিয়া-প্যাসিফিক রিসার্চ সেন্টারে অকসেনবার্গ-রোহলেন ফেলো হিসেবে কর্মরত।

আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারসিয়েল তাঁর লেখা ‘ইমপারফেক্ট পার্টনারস: দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়া’ শীর্ষক বই ও আঞ্চলিক রাজনীতির নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। কূটনীতিক হিসেবে কয়েক দশকের কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বইটি লিখেছেন। সাক্ষাৎকারে মিয়ানমারে অভ্যুত্থান থেকে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সম্প্রসারণবাদ এবং এ নিয়ে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উদ্বেগ ও বিভক্তির কথা উঠে এসেছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, তা–ও বলেছেন তিনি। কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে সাক্ষাৎকারটি প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন:

আল–জাজিরা: ‘ইমপারফেক্ট পার্টনারস’ বইয়ে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তথ্য উঠে এসেছে। ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক জোরদার করছে। কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও লাওস আছে চীনের প্রভাববলয়ে। শক্তিধর দেশগুলোর শত্রুতার কারণে কি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি বাড়ছে?

স্কট মারসিয়েল: দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নিশ্চিতভাবেই কিছুটা উদ্বেগজনক বিভক্তি আছে। তবে এ জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মুখ্য কারণ বলব না। আসিয়ানে (অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস) চীনপন্থী ও যুক্তরাষ্ট্রপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে আমি বিভাজন দেখিনি। আমরা দেখছি, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছে। বিষয় ও সময়ের বিবেচনায় কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি একদিকে ঝুঁকে পড়েছে। তবে তারা জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা, মিয়ানমার পরিস্থিতি ও দক্ষিণ চীন সাগরসংক্রান্ত বিষয়ে বিভক্তি উদ্বেগের। এসব ঘটনার কোনো কোনোটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে দক্ষিণ চীন সাগরের উত্তেজনার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

স্কট মারসিয়েল
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি
প্রশ্ন:

আল–জাজিরা: যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের মধ্যে সম্প্রতি সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। তাদের মধ্যে বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে উঠেছে। কয়েক দশক আগের পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি বড় ধরনের পরিবর্তন। কয়েক দশক আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধে হো চি মিন সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে লড়াই হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর হ্যানয়ে নিযুক্ত প্রথম মার্কিন কূটনীতিক ছিলেন আপনি। তখন দেশটি কেমন ছিল?

স্কট মারসিয়েল: ১৯৯৩ সালের আগস্টে আমি হ্যানয়ে যাই। তখনো আমাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। তবে গত কয়েক বছরে আমরা আলোচনা শুরু করেছি। একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর নির্ভরশীল ভিয়েতনাম ওই দেশের পতনের পর তাদের সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে চাইল। অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে তারা অর্থনৈতিক অংশীদারত্বও গড়ে তুলল।
যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিভাজন দূর করাটাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্নায়ুযুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে কৌশলগতভাবে অতটা গুরুত্ব দেয়নি। তবে কম্বোডিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের সমর্থন পেতে আমরা অনেক আগ্রহী ছিলাম।
আমি যখন প্রথম ভিয়েতনামে পৌঁছাই, তখন দেশটিতে সংস্কার প্রক্রিয়া চলছিল। তখনো তাদের একেবারেই দরিদ্র অবস্থা। তবে দেশটির মানুষের মধ্যকার উজ্জীবনী শক্তি টের পাওয়া যাচ্ছিল। ছোট ছোট প্রচুর দোকান খোলা হচ্ছিল। শুরুর দিনগুলোয় আমরা যুদ্ধপরবর্তী মৌলিক আস্থা তৈরির চেষ্টা করছিলাম। এ জন্য আমরা কিছু কাজ করছিলাম, নিখোঁজ মার্কিন নাগরিকদের তালিকা তৈরির মতো কিছু কাজ করেছি।
কয়েক বছর পর ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হতে থাকে। আমার দৃষ্টিতে তখন থেকে সম্পর্কের মোড় ঘুরে গেছে। খুব দ্রুত এটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্কে রূপ নেয় এবং স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে এই সহযোগিতা বিস্তৃত হয়।
ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারত্ব তেমনই একটি অর্থনৈতিক সম্পর্কের নজির। আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ভিয়েতনাম যেন বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তার সুযোগ খুঁজছে দুই দেশ।

প্রশ্ন:

আল–জাজিরা: আপনি একসময় ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন নির্বাচনে কী কী সংকট হতে পারে? যুক্তরাষ্ট্র কিসের ওপর নজর রাখছে?

স্কট মারসিয়েল: ইন্দোনেশিয়ায় গণতন্ত্রের রূপান্তরের বিষয়টি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় অপ্রশংসিত গল্পগুলোর একটি। এটি সত্যিকার অর্থে বড় ধরনের অর্জন। সুহার্তোর শাসনকালে এবং ১৯৯৮ ও তার পরবর্তী কয়েক বছরে ইন্দোনেশিয়ায় বেশ উত্তাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে রূপান্তর ঘটেছে। এ রূপান্তর তারা ধরে রাখতে পেরেছে এবং এ জন্য তারা অনেক প্রশংসার দাবি রাখে।
আগামী বছরের নির্বাচন সে গণতন্ত্রকে আরও মজবুত করবে। আশা করি, ইন্দোনেশিয়ায় বিপুল ভোটারের উপস্থিতিতে অত্যন্ত স্বচ্ছ, বস্তুনিষ্ঠ ও ভালোভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির দিক থেকে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। তবে অবাধ ও কার্যকর পররাষ্ট্রনীতির জন্য ইন্দোনেশীয়রা যে আওয়াজ তুলেছে, তার পক্ষে সমর্থন আছে বলে মনে হচ্ছে।
হুট করে কোনো বড় শক্তিধর পক্ষের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না। আমি মনে করি, ইন্দোনেশিয়া আসিয়ান এবং বিশ্বে অত্যন্ত দৃঢ়, স্বাধীন ভূমিকা পালন করে যাবে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে ইন্দোনেশীয়রা নিজেদের মতো করে মতামত দেবে।

প্রশ্ন:

আল–জাজিরা: ২০২৪ সালে লাওস আসিয়ান সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবে। লাওসের নেতৃত্বে দক্ষিন চীন সাগর ও মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে কী বদল আসতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

স্কট মারসিয়েল: আসিয়ানের সদস্যদেশগুলো অনেক বিষয়ে একমত। তবে দক্ষিণ চীন সাগরসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ আছে। যারা দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় মালিকানা দাবি করছে এবং যারা বেইজিংয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না, তাদের মধ্যেই মূলত মতভিন্নতা আছে।
মিয়ানমার সংকট নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে লাওস বড় ধরনের পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিলে আমি অবাক হব। সত্যিকার অর্থে আসিয়ান জোট জানে না, কী করতে হবে। পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ইন্দোনেশিয়ার সভাপতিত্বেও জোটটি তেমন কিছু করতে পারেনি। লাওসের নেতৃত্বে নাটকীয় কোনো বদল আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে লাওস আরও বেশি করে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের (এসএসি) সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী হতে পারে।
আমার ধারণা, আসিয়ানের শীর্ষ রাজনৈতিক বৈঠকে মিয়ানমারের জান্তাদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি গোটা আসিয়ান জোটের। এটি লাওসের একক সিদ্ধান্ত নয়। লাওসের প্রতিনিধি মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে নেপিডোতে যেতে পারেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো, এতে বাস্তবিকভাবে খুব একটা বদল আসবে না।

প্রশ্ন:

আল–জাজিরা: থাই সাংবাদিক কাভি চংকিত্তাভর্ন একটি কলামে যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্টের প্রসঙ্গ টেনে মিয়ানমারে ছোট আকারের একটি ছায়া যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করেছেন। বার্মা অ্যাক্ট নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি থেকেই কি এমন কিছুর অবতারণা?

স্কট মারসিয়েল: আমার ভালো বন্ধু কাভির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, যুক্তরাষ্ট্র যা করছে, তাতে আমি বার্মা অ্যাক্ট বা অন্য কিছু দেখছি না। কোনোভাবেই তা ছায়া যুদ্ধ নয়। এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুধু একটি দেশই একটি পক্ষকে অস্ত্র দিচ্ছে। সেই পক্ষ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নয়।
যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জনগণের পক্ষে সরব থাকার এবং কূটনৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। সবকিছুর পরও আমাদের মিয়ানমারের জনগণের কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে, যারা সেনাবাহিনীকে দেশের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই জান্তা সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। সে দেশের জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সহানুভূতিশীল। তাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে। কিন্তু তারা অস্ত্র সরবরাহ করছে না।
মিয়ানমারের সংকট যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিষয় নয়। মিয়ানমারের ভেতরে কী ঘটছে, জনগণ কী বলছে—সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ বলছে, সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করতে হবে। তাদের চিরতরে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। আমি মনে করি, জনগণ ঠিক কথাই বলছে। অনেক দেশই তাদের সমর্থন দিচ্ছে না, এটা দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি কোনো কোনো প্রতিবেশী দেশও জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।
বার্মা অ্যাক্টে গণতন্ত্র পুনর্বহালের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে। সেখানে অস্ত্রা বা প্রাণঘাতী নয়, এমন সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মিয়ানমারের কয়েকজন সেনাসদস্য গাড়ি নিয়ে টহল দিচ্ছেন
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি
প্রশ্ন:

আল–জাজিরা: কয়েক দশকের কূটনীতিক জীবনে কীভাবে আপনি চীনের কূটনীতি ও আচরণ বদলাতে দেখেছেন? দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কি চীনের প্রভাব মোকাবিলা করতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে?

স্কট মারসিয়েল: গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝিতে আমি যখন কূটনীতিক হিসেবে কাজ শুরু করি, তখন দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় চীনের বড় কোনো প্রভাব ছিল না। আশির দশকের শেষের দিক থেকে পরবর্তী ২০ বছরের বেশি সময়ে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে চীনের সম্পৃক্ততা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়।
২০০৮ সালের দিকে আমরা দেখতে পাই, চীন কূটনীতির ভাষায় আক্রমণ থেকে সরে গিয়ে এখন কূটনীতিতে অনেকটা পেশিশক্তির জোর দেখাতে চাইছে। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যাচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে চীনের কূটনীতি বেশ দৃঢ়, এমনকি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। সর্বত্র এর প্রভাব বিস্তৃত হয়েছে।
চীনের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, এটা সত্য। আমি মনে করি, চীনের প্রভাবের কারণে তাকে নিয়ে চিন্তিত হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। বরং চীনের সমস্যাপূর্ণ আচরণ নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত, যেমনটা দক্ষিণ চীন সাগরে করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনকে মোকাবিলার বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, চীন যেখানে যাচ্ছে সেখানকার দেশগুলোও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত, ওই অঞ্চলে নিজেকে দৃঢ়, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত এবং ভালো অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করা।
আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণ অর্থে তা করেছে, তবে এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দেশগুলো যেমনটা রাখতে চায়, তার সঙ্গে সংগতি রাখা যায়নি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কমতি আছে। বিশেষ করে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে এসেছে। সুতরাং ওয়াশিংটনের উচিত, ওই অঞ্চলে চীনকে মোকাবিলার ওপর জোর না দিয়ে নিজেদের উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া।

প্রশ্ন:

আল–জাজিরা: রাশিয়া চীনের চেয়ে বেশি করে মিয়ানমারের জান্তাকে সমর্থন দিচ্ছে। যেমন পারমাণবিক জ্বালানির উন্নয়নে মিয়ানমার সরকারকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য জায়গায় মস্কোর উদ্যোগ কি উদ্বেগের?

স্কট মারসিয়েল: সংবাদে আমরা প্রতিদিনই দেখছি, রাশিয়া কতটা বিধ্বংসী ক্ষমতার দেশ। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতি সমর্থনের মধ্য দিয়ে তাদের মনোভাব বোঝা যাচ্ছে। এটি পুরোপুরি অনৈতিক পররাষ্ট্রনীতি। এটি অস্ত্র বিক্রির একটি সুযোগ।

মস্কো তাদের প্রভাবও বিস্তৃত করতে চাইছে। অবশ্য আমার মনে হয়, মিয়ানমারে এর খুব বেশি প্রভাব থাকবে না। রাশিয়া বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভোগ তৈরি করছে। মিয়ানমার এখন তার উর্বর একটি ক্ষেত্রে। অতীতের সমর্থনের কারণে ভিয়েতনাম ও লাওসে এখনো রাশিয়ার কিছুটা প্রভাব আছে।
একে চীনের সঙ্গে তুলনা করা যাক। মিয়ানমারের সংকটের ক্ষেত্রে বেইজিং আরও অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, চীনের স্বার্থের কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়নি। যেকোনো গণতান্ত্রিক সরকারই বেইজিংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইবে। তবে পুতিন যত দিন ক্ষমতায় আছেন, তত দিন রাশিয়ার জন্য কোনো আশা নেই।

ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ: ফাহমিদা আক্তার