প্রকাশ্যে চারজনের হাত কেটে দিয়েছে তালেবান
আফগানিস্তানে নয় ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করেছে ক্ষমতাসীন তালেবান। এ ছাড়া চুরির দায়ে তালেবান প্রকাশ্যে চার ব্যক্তির হাত কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর এএনআইয়ের।
গতকাল মঙ্গলবার দেশটির কান্দাহারের আহমেদ শাহি স্টেডিয়ামে বেত্রাঘাতের ঘটনাটি ঘটে। দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডাকাতি ও সমকামিতার দায়ে নয়জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিটি টুইট করেছে আফগানিস্তানের টোলো নিউজ।
বেত্রাঘাতের সময় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও কান্দাহারের বাসিন্দারা স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন। প্রাদেশিক গভর্নরের মুখপাত্র হাজি জায়েদ বলেছেন, দোষী ব্যক্তিদের ৩৫ থেকে ৩৯টি করে বেত্রাঘাত করা হয়েছে।
ব্রিটিশ-আফগান সমাজ-রাজনৈতিক কর্মী শবনম নাসিমি বলেছেন, কান্দাহারের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে দর্শকদের সামনে গতকাল তালেবান চারজনের হাত কেটে দিয়েছে বলে জানা গেছে। চুরির অভিযোগে তাঁদের হাত কাটা হয়।
শবনম নাসিমি বলেন, আফগানিস্তানে ন্যায়বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই লোকজনকে বেত্রাঘাত, অঙ্গচ্ছেদ ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
গত বছরের নভেম্বরে দেশটির বিচারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তালেবানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। বৈঠকে কিছু অপরাধের জন্য শরিয়াহ আইনে শাস্তি প্রদান করতে বিচারকদের নির্দেশ দেন তিনি। তার পর থেকেই তালেবান প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের সাজা কার্যকর করছে।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তির প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে তালেবান। ২০২১ সালের আগস্টে দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। এই দফায় ক্ষমতা দখলের পর এদিনই তালেবান প্রথম প্রকাশ্যে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
আন্তর্জাতিক নিন্দা-সমালোচনা সত্ত্বেও আফগান তালেবান তাদের সর্বোচ্চ নেতার ডিক্রি অনুসরণ করে ‘অপরাধীদের’ প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর আবার চালু করেছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা আফগানিস্তানে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা তালেবান কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সব ধরনের কঠোর, নিষ্ঠুর ও অবমাননাকর শাস্তি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত তালেবান কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে শতাধিক ব্যক্তিকে বেত্রাঘাত করেছে বলে জানা গেছে।
আফগানিস্তানে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তালেবানের প্রথম শাসনামলে বেত্রাঘাত-পাথর নিক্ষেপের মতো কঠোর শরিয়াহ আইনের সাজা কার্যকর ছিল। তবে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা এবার অতীতের মতো দেশ শাসন করবে না। কিন্তু তালেবানের আবার পুরোনো ধারায় ফেরার আলামত দেখা যাচ্ছে।