থাইল্যান্ডে নিষিদ্ধ হলেন পিটা, বিলুপ্ত হলো মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি

দেশটির প্রাচীন রাজকীয় মানহানি আইন সংস্কারে পিটার প্রচেষ্টার কারণে সাংবিধানিক আদালত এ রায় দিয়েছেন।

সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী এবং মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত (মধ্যে)। গতকাল ব্যাংককের আদালত প্রাঙ্গণেছবি: এএফপি

থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক পিটা লিমজারোয়েনরাতকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করেছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। একই সঙ্গে গত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া তাঁর মুভ ফরোয়ার্ড পার্টিকে (এমএফপি) বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রাচীন রাজকীয় মানহানি আইন সংস্কারে পিটার প্রচেষ্টার কারণে আদালত এ রায় দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার ব্যাংককে সাংবিধানিক আদালত সর্বসম্মতভাবে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি এবং এর নির্বাহী পরিষদকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। একই সঙ্গে দলটির সাবেক নেতা পিটাকে ১০ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিচারক পুনিয়া উদচাচোন এ কথা জানিয়েছেন।

সংস্কারপন্থী ৪৩ বছর বয়সী পিটার নেতৃত্বাধীন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়ে সবাইকে চমকে দেয়। থাইল্যান্ডের কঠোর রাজকীয় মানহানি আইন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তরুণ ও শহুরে ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিলেন। অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গণতন্ত্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে স্তব্ধ করার জন্য এই আইনের অপব্যবহার হয়ে আসছে।

পিটার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা সামরিক বাহিনী ও রক্ষণশীল নিয়ন্ত্রিত সিনেট আটকে দিয়েছিল। পরে সেনাসমর্থিত দলগুলো স্রেথা থাভিসিনকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করে।

গত মার্চে নির্বাচন কমিশন মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে সাংবিধানিক আদালতে আবেদন করলে পিটার রাজনৈতিক জীবনে আরেক দফা ধাক্কা লাগে। এরপর আদালতের এক আদেশে তাঁর বিরুদ্ধে আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির সাংবিধানিক রাজতন্ত্র উৎখাতের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।

থাইল্যান্ডে গত বছরের ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য পায় মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি। তারুণ্যনির্ভর দলটি ৫০০ আসনের নিম্নকক্ষে সর্বোচ্চ ১৫১ আসন পায়। আর ৩১২ আসন পায় মুভ ফরওয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট। ৭৫০ সদস্যের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৭৬ ভোটের। কিন্তু সামরিক বাহিনী ও রক্ষণশীল নিয়ন্ত্রিত সিনেট পিটার প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকে দেয়।

পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোটে প্রথম দফায় পিটা ৩২৪ ভোট পেয়েছিলেন। এর মধ্যে সিনেটর ছিলেন মাত্র ১৩ জন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটরের সমর্থন না পাওয়ায় তিনি নির্বাচিত হননি। বাধার মুখে দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে পারেননি পিটা। একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকার অভিযোগে দেশটির সাংবিধানিক আদালত তাঁর এমপি পদ স্থগিত করেন।

গত বছরের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্রদলগুলোর জন্য ছিল বড় ধাক্কা। তবে সংসদীয় বিধিগুলো অনুকূলে থাকায় এবং তাদের পেছনে প্রভাবশালীদের হাত থাকায় সেনা-সমর্থিত দলগুলো সরকার গঠন করে।

মূলত ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের পর সেনা সরকার প্রণীত সংসদীয় বিধির কারণে পিটার দল সরকার গঠন করতে পারেনি। ওই বিধি সেনাসমর্থিত দলগুলোকে সুবিধা দেয়। ওই সংশোধনের ফলে যে দলই নির্বাচনে জয় পাক না কেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা ঠিক করার বড় ক্ষমতা থেকে যায় সামরিক বাহিনীর হাতে।

জান্তা সরকারের সময় থাইল্যান্ডের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, সিনেটের ২৫০ আসনের সদস্যদের নির্বাচিত করে সামরিক বাহিনী। তাদের সেনাপন্থীদের সমর্থন দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। বলা চলে, ২০১৯ সালের নির্বাচনের কথাই। সেবার সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল ফিউ থাই। এরপরও সিনেটের সমর্থন পেয়ে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান প্রাউত চান-ওচা।