থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পিটাকে এমপি পদে ‘অযোগ্য’ঘোষণার সুপারিশ
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পিটা লিমজারোয়েতকে এমপি হিসেবে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালতে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বলছে, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির (এমএফপি) নেতা পিটার বিরুদ্ধে একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে মালিকানায় থাকার অভিযোগের ভিত্তি পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করেছেন তিনি।এর ফলে গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ‘অযোগ্য’ ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত পিটাকে পার্লামেন্টের সদস্যপদ থেকে বরখাস্ত করার আরজি জানাবে কমিশন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোটাভুটি হবে। নির্বাচন কমিশনের এ সুপারিশের কারণে পিটা প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে কমিশনের এই সুপারিশের কারণে আজ বৃহস্পতিবার হতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনে পিটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ৪২ বছর বয়সী পিটাকে জিততে হলে পেতে হবে পার্লামেন্ট সদস্যদের অর্ধেকের বেশির ভোট।
এদিকে পিটার দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি নির্বাচন কমিশনের সুপারিশকে তিরস্কার জানিয়েছে। দলটির ভাষ্য, পিটাকে অভিযোগ খণ্ডনের সুযোগ না দিয়ে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
দলটির মহাসচিব চাইথাওয়াত তুলাথন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদে পিটার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার শতভাগ অধিকার এখনো আছে। আমরা এসব সংস্থাকে এই বার্তা দিতে চাই যে জনগণের রায় ভুলে যাবেন না।’
নির্বাচনে অংশ নিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সময় মিডিয়া ফার্ম আইটিভিতে পিটার ৪২ হাজার শেয়ারের মালিকানা ছিল। এর ফলে পিটা নির্বাচনে (গত ১৪ মে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য। এই অভিযোগ তদন্ত করছে নির্বাচন কমিশন।
তবে পিটার দাবি, তিনি কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেননি। কারণ, আইটিভি অনেক বছর ধরে সক্রিয় নয়।
যদিও আজ বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের ভোটে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এখনো তাঁর আরও প্রয়োজন ৬৪ ভোট। এই ভোট তাঁকে নিম্নকক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো থেকে অথবা সেনা-সমর্থিত সরকারের নিয়োগ দেওয়া সিনেট সদস্যদের কাছ থেকে পেতে হবে।
পিটাকে অযোগ্য ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে সিনেটর জেন্ত সিরাথ্রানন রয়টার্সকে বলেন, এখন পিটাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিতে এই বিষয় প্রভাব ফেলবে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে হতে হবে সম্মানিত ও কলঙ্কমুক্ত।
গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য পায় পিটার দল এমএফপি। তারুণ্যনির্ভর দলটি ৫০০ আসনের নিম্নকক্ষে সর্বোচ্চ ১৫১ আসন পেয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪১ আসনে জয় পায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাসিত নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার দল ফেউ থাই। এই দুই দলের কাছে ধরাশায়ী হয় সেনা-সমর্থিত ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টি।
থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে রয়েছে ৫০০ আসন। আর উচ্চকক্ষ সিনেটে আসন ২৫০টি। দুই কক্ষ মিলিয়ে সরকার গঠনে প্রয়োজন হবে ৩৭৬টি আসন।
গত ১৫ জুন থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রপন্থী প্রধান দুই বিরোধী দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ও ফেউ থাই পার্টি জোট সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে। জোট সরকারে আরও চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০৯টি আসন নিশ্চিত করতে পেরেছেন বিরোধী দল এমএফপির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পিটা লিমজারোয়েনরাত। ফলে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বিরোধীদের।