কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভুটানের নেতৃত্বে নতুন ফোরাম ‘জি-জিরো’

ভুটানসহ চার দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়োজক কর্মকর্তাদের একজন। বাকু, ১৩ নভেম্বরছবি: সংগৃহীত

গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা ও প্রকোপ কমাতে পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর যখন হিমশিম অবস্থা, ঠিক সেই সময় ভুটানের নেতৃত্বে চার কার্বন নিরপেক্ষ দেশ নতুন এক গোষ্ঠী তৈরি করল। বাকুতে ‘কপ ২৯’-এর আসরে সেই গোষ্ঠী গঠনের পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বলেন, ‘এই মুহূর্তে পৃথিবীতে যে কয়টি কার্বনহীন অথবা কার্বন নিরপেক্ষ দেশ রয়েছে, ভুটান সেগুলোর অন্যতম। আমরা চাই, আমাদের মডেল অন্যরাও গ্রহণ করুক। নতুন এই গোষ্ঠী সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করবে।’

নতুন এই গোষ্ঠীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জি-জিরো’। ভুটান ছাড়া এই গোষ্ঠীর বাকি সদস্যরা হচ্ছে পানামা, সুরিনাম ও মাদাগাস্কার। এই চার দেশে যতটুকু কার্বন নিঃসরণ হয়, তা হয় দূষণমাত্রার চেয়ে কম নতুবা সেই দূষণ শুষে নেওয়ার মতো পরিবেশব্যবস্থা তারা তৈরি করতে পেরেছে। কাজেই এসব দেশ থেকে নিঃসরিত কার্বন উষ্ণায়নের কারণ হয় না।

পানামার বিশেষ দূত হুয়ান কার্লোস মন্টেরি গোমেস প্রথম আলোকে বলেন, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু প্রকৃতি ও মানুষের ক্ষতি না করে কীভাবে তা করা যায়, পানামা তা দেখাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে এই লক্ষ্যে পানামা আরও নতুন নতুন ব্যবস্থা নেবে।

এই গোষ্ঠী গঠনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। গোষ্ঠী গঠনের পর প্রথম আলোকে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য নয়। তাঁরা চান দেশের মানুষকে সুখে রাখতে। সেই সুখের জন্য তাঁরা ভিন্নধর্মী এক উন্নয়নের পথে হাঁটছেন, যা তাঁদের দেশকে দূষণমুক্ত রাখতে পেরেছে।

তোবগে বলেন, ‘জি-জিরো’গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁরা বিকল্প পথের সন্ধান দিতে চান গোটা বিশ্বকে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কমানো বা তা শুষে নেওয়ার মধ্য দিয়ে স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলা যায়। উষ্ণায়ন কমিয়ে পৃথিবীকে সবার জন্য বাসযোগ্য করে তোলা যায়।

গড় জাতীয় সুখের তালিকায় ভুটান পৃথিবীর এক নম্বর দেশ। ভুটানের রাজা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুক ১৯৭২ সালে স্থির করেছিলেন, শুধু অর্থনৈতিক বিকাশই নয়, তার সঙ্গে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও তিনি লক্ষ্য রাখবেন। দেখবেন, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল দিতে গিয়ে যাতে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন না হয়। মানুষ যেন ক্লান্ত হয়ে না ওঠে। মনের অসুখ যাতে না বাড়ে।

সেই লক্ষ্যে ভুটান এখনো অবিচল। পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে টেকসই উন্নয়নের ধারা অনুশীলন করতে ভুটানের মতো এগিয়ে এসেছে সুরিনাম, মাদাগাস্কার ও পানামা। চার দেশের এই অক্ষ চায় পরমুখাপেক্ষী হয়ে বসে না থেকে নিজেদের শুধরে উষ্ণায়ন কমিয়ে নজির সৃষ্টি করতে। বাকুতে জোটবদ্ধ হয়ে তাঁরা সেই বার্তাই দিলেন।

জি-জিরো গঠনের পর শেরিং তোবগে সাউথ ইশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরামের সঙ্গে আলাপে বলেন, ‘জি-জিরো গঠন এক ঐতিহাসিক মাইলফলক ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের শক্তির প্রমাণ। পরিবেশ ঠিক রেখেও যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটানো যায়, তা প্রমাণে আমরা সচেষ্ট।’

তোবগে বলেন, ‘বড় ও ধনী দেশগুলোকে আমরা দেখাতে চাই, ছোট দেশগুলোও পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মসূচিতে শক্তিশালী নেতৃত্ব দিতে পারে। আমরা প্রমাণ করেছি, ছোটভাবে আমরা যা অর্জন করেছি, বড়ভাবে বড় দেশও তা অর্জনে সক্ষম। দরকার ইচ্ছাশক্তির দৃঢ়তা।’