মিয়ানমারে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে নৃশংস কর্মকাণ্ড বলল এইচআরডব্লিউ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) মিয়ানমারে চার গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। একে ‘সম্পূর্ণ নৃশংস কর্মকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ সোমবার এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এলাইনে পিয়ারসন এসব কথা বলেন। খবর রয়টার্স।
স্থানীয় সময় আজ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের প্রতিবেদনে বলা হয়, নৃশংস ও অমানবিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ায় চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
তবে কখন ও কীভাবে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ১৯৮৮ সালের পর এটি মিয়ানমারে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ করে আজ এলাইনে পিয়ারসন বলেন, আন্দোলনকর্মী কিয়াউ মিন ইউ এবং বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা ফিয়ো জেয়া থর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাটি ‘সম্পূর্ণ নৃশংস’।
জান্তাকে যে এ অপরাধকর্মের মূল্য চুকাতে হবে, তা তাদের দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। গত বছর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পর ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় জান্তা।
সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সাবেক আইনপ্রণেতা ফিয়ো জেয়া থকে জানুয়ারিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছরের নভেম্বরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সরকারি বাহিনীর ওপর বেশ কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল ফিয়ো জেয়া থর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে গত বছরের আগস্টে ইয়াঙ্গুনে একটি কমিউটার ট্রেনে বন্দুক হামলার ঘটনাও রয়েছে। ওই হামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য নিহত হন।
গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকর্মী কিয়াও মিন ইউকেও সামরিক ট্রাইব্যুনালে একই সাজা দেওয়া হয়। অপর দুই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ইয়াঙ্গুনে এক নারীকে হত্যার দায়ে। তাঁদের অভিযোগ, ওই নারী জান্তার জন্য তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করছিলেন।
গত মাসেই মিয়ানমারের জান্তা ঘোষণা করেছিল, তারা এই চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চায়। সে সময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল জান্তা।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমার জান্তার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তকে মানুষের জীবনযাপন, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় আরও অনেক ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, জান্তার সামরিক আইন অনুযায়ী ২৩টি ‘অনির্দিষ্ট ও ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত অপরাধের ঘটনায়’ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর যেকোনো ধরনের সমালোচনাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হোরসি এক টুইটার পোস্টে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাকে জঘন্য কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন।