২৫ বছর পর শিশুর জন্ম, যে বার্তা দিচ্ছে জাপানি গ্রাম

মা-বাবার সঙ্গে কেনতারো ইয়োকোবারি
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

প্রায় সাত বছর আগের কথা। জাপানের সোগিও জেলার কাওয়াকামি গ্রাম। সেই বছর ওই গ্রামে এক শিশুর জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় কেনতারো ইয়োকোবারি। কেনতারোর জন্ম ঘিরে পুরো গ্রামে উৎসবের আমেজ পড়ে যায়। নবজাতক দেখে অনেকে অবাক হন। কারণ, ২৫ বছর পরে গ্রামে জন্ম নেওয়া প্রথম শিশু ছিল সে।

কেনতারোকে দেখতে তাদের বাড়িতে এক সপ্তাহ ধরে মানুষের ভিড় লেগে ছিল। শুভাকাঙ্খীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় কেনতারোর মা মিওয়ো আর বাবা হিরোহিতোর। এই সময়ে তাঁদের বাড়িতে যাঁরা ভিড় করেছিলেন তাঁদের প্রায় সবাই ছিলেন প্রবীণ। হাঁটতে কষ্ট হয় এমন প্রবীণেরাও ভিড় করেন বাড়িতে।

কেনতারোর জন্মের সময়ের স্মৃতিচারণা করে তার মা মিওয়ো বলেন, ‘কেনতারোকে দেখে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষেরা অনেক খুশি হয়েছিল। এমনকি অনেক বয়স্ক নারী ছিলেন, যাঁদের হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়, সিঁড়ি মাড়াতে পারেন না, তাঁরাও অনেক কষ্ট করে এসে আমার সন্তান কোলে নিতেন। পালা করে সবাই কোলে নিত।’

সিকি শতাব্দী কোনো শিশুর জন্ম না হওয়ায় কাওয়াকামি গ্রামের জনসংখ্যা অর্ধেকের বেশি কমে যায়। চল্লিশ বছর আগেও ওই গ্রামে ছয় হাজার মানুষ ছিল। ২৫ বছর সেখানে কারও জন্ম না হওয়ায় বাসিন্দাদের সংখ্যা কমে মাত্র ১ হাজার ১৫০ জনে দাঁড়ায়। তরুণেরা গ্রাম ছেড়েছে, প্রবীণেরা মারা গেছেন। অনেক ঘর পরিত্যক্ত, কিছু ঘর হয়েছে বণ্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল।

তবে জাপানের জন্মহার তলানিতে গিয়ে ঠেকার উদাহরণ শুধু কাওয়াকামি নয়, একই অবস্থা আরও অনেক গ্রাম ও মফস্‌সল শহরের। এর অন্যতম কারণ তরুণদের শহরমুখী হওয়া। এতে গ্রামে নতুন পরিবার কমে গেছে। জাপানে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এখন টোকিও, ওসাকা ও কিয়োতোর মতো নগরাঞ্চলের বাসিন্দা।

তরুণদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতার কারণে জাপানের গ্রামীণ এলাকাগুলো দিন দিন পরিত্যক্ত জনপদে পরিণত হচ্ছে। কৃষি, বনায়ন, গবাদি পশু লালন-পালনের মতো খাতগুলোয় শ্রমিক সংকট ভয়াবহ। ১০ বছর আগে কৃষি ও বনায়ন খাতে কাজ করত প্রায় ২৩ লাখ মানুষ। কিন্ত ২০২২ সালে এ সংখ্যা কমে ১৯ লাখে দাঁড়িয়েছে।

গত জানুয়ারির হিসাবে জাপানে মোট জনসংখ্যা সাড়ে ১২ কোটির মতো। গত বছর সেখানে আট লাখের কম শিশুর জন্ম হয়েছে। অথচ ৭০-এর দশকেও দেশটিতে বছরে ২০ লাখের বেশি শিশুর জন্ম হতো। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সম্প্রতি বলেন, ‘এখনই ব্যবস্থা না নিলে জাপানের সমাজব্যবস্থা অচল হয়ে পড়বে।’

ফুমিও কিশিদা জাপানে নতুন বছরে শুরুতে তাঁর সরকারের নীতি নিয়ে বক্তব্য দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতি সামাজিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে পারে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শিশুর জন্ম ও পালনসংক্রান্ত নীতি এখনই নিতে হবে। এটি এমন একটি বিষয়, যার জন্য আর অপেক্ষা করা যায় না।’

কয়েক বছর ধরেই জন্মহার বাড়াতে জনগণকে নানা উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে জাপান সরকার। বেশি সন্তান নিয়ে নগদ অর্থসহ নানা সুবিধার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে সমীক্ষা অনুযায়ী, শিশু লালন–পালনের ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর একটি জাপান। এ কারণে অনেকে সন্তান নিতে চান না।