ইরানে মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতে আরও শত বিক্ষোভকারী
ইরানে চলমান বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে অন্তত ১০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, এমন অপরাধের দায় তোলা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে পাঁচজন নারীও আছেন। ইরান নিয়ে কাজ করা নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এই হিসাব দিয়েছে। খবর বিবিসির।
তবে মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা বিক্ষোভকারীর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করছে আইএইচআর। সংস্থাটি বলছে, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিদের প্রকৃত হিসাব পাওয়াটা কঠিন। কারণ, যেসব বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে বা হবে, তাঁদের পরিবারকে বিষয়টি গোপন রাখতে চাপ দিচ্ছে সরকার।
বিক্ষোভে জড়িত থাকার দায়ে দোষী সাব্যস্ত দুজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে চলতি মাসে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা এ বিচারপ্রক্রিয়াকে বিক্ষোভ দমনে সরকারের ‘প্রহসন’ বলে বর্ণনা করছেন।
মহসেন শেকারি ও মাজিদরেজা নামের ২৩ বছর বয়সী দুই তরুণের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে অভিযোগ এনে ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতা’র দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দেশটির ‘বিপ্লবী’ আদালত। একই অভিযোগে মোহাম্মদ ঘোবাদলু (২২) নামের এক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিপ্লবী আদালত। গত শনিবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার আইএইচআর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে সংস্থাটি বলেছে, অন্তত ১০০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে তারা। এসব ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ বা তাঁদের পরিবার নিশ্চিত করেছে। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এসব ব্যক্তি আইনজীবী নিয়োগ, যথাযথ বিচারপ্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
দণ্ডিত এসব বিক্ষোভকারীর বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ করতে পেরেছেন বা তাঁদের ঘটনাগুলো অন্য কারাবন্দী নয়তো মানবাধিকারকর্মীদের জানিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করা হয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে মাসা আমিনি (২২) নামের এক কুর্দি তরুণীর মৃত্যু হয়। হিজাব নীতি না মানার অভিযোগে এর তিন দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নীতি পুলিশ। মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ দমনে বল প্রয়োগ করা হচ্ছে। প্রাণঘাতী অস্ত্রও ব্যবহার করা হচ্ছে। আইএইচআরের হিসাবে এ পর্যন্ত অন্তত ৪৭৬ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৪ শিশু ও ৩৪ নারীও আছেন।