পুতিনের জন্য জমকালো আয়োজন কিমের, কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি সই
জমকালো আয়োজনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন। আজ বুধবার পিয়ংইয়ংজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
দুই দেশের পতাকা, লাল গোলাপ, বেলুন এবং পুতিন ও কিমের বিশাল বিশাল ছবি দিয়ে পুরো রাজধানী সাজিয়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় সময় আজ সকালে কিম ইল সাং স্কয়ারে পুতিনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সে সময় সেখানে অনেক বেসামরিক নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বিশেষ করে শিশুদের পরনে ছিল উত্তর কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক। রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানের ভিডিও সম্প্রচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আরআইএ পুতিনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ‘রাশিয়া নীতিতে আপনার ধারাবাহিক ও অটল সমর্থনের আমরা উচ্চ প্রশংসা করছি, যার মধ্যে ইউক্রেন নীতিও রয়েছে।’
মস্কো মার্কিন ও দেশটির মিত্রদের আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে বলেও জানান পুতিন।
জবাবে কিম বলেন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সম্পর্ক ‘সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায়’ প্রবেশ করেছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়ে গেছে ও দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা রাশিয়া ও রাশিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী। উত্তর কোরিয়া রুশ সরকার, দেশটির সশস্ত্র বাহিনী এবং ওই সব লোকজন, যাঁরা সার্বভৌমত্বের রক্ষায়, নিরাপত্তার স্বার্থে ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করছেন, তাঁদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করছে।’
কিম ইল সাং স্কয়ারে গার্ড অব অনার শেষে কিম ও পুতিন কুমসুসান প্যালেসে যান। সেখানে দুই নেতা বৈঠক করেন।
এদিন দুই দেশের মধ্যে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আরআইএ। পুতিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ এ চুক্তি সই হওয়ার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার রুশ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ওই চুক্তিতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ সই হওয়া চুক্তিতে ঠিক কী কী বিষয়ের উল্লেখ আছে, তা এখনো জানা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দুই দিনের সফরে গতকাল স্থানীয় সময় দিবাগত রাত তিনটার দিকে পিয়ংইয়ং বিমানবন্দরে পৌঁছান পুতিন। করমর্দন ও উষ্ণ আলিঙ্গনে সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন।
বিমানবন্দরে পুতিনকে দেওয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। লাল গোলাপ দিয়ে পুতিনকে বরণ করা হয়।
প্রায় ২৪ বছর আগে ২০০০ সালের জুলাইয়ে পুতিন সবশেষ উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়েছিলেন।
এবার পুতিন এমন একসময়ে উত্তর কোরিয়া সফরে এসেছেন, যখন উভয় দেশই আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, মোকাবিলা করতে হচ্ছে নানা নিষেধাজ্ঞা।
শত্রু দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে বিরক্ত করতে রাশিয়া অনেক সময় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নিজেদের উষ্ণ সম্পর্ককে ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। এদিকে পিয়ংইয়ং মস্কোর কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের আশঙ্কা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র প্রকল্পে রাশিয়া সহায়তা দেবে। এ বিষয়ে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিনিময়ে রাশিয়াকে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা দেবে উত্তর কোরিয়া। যে অস্ত্র ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।
মস্কো ও ইউক্রেন—উভয়ই অবশ্য অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।