২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিক্ষোভ দমনে চলছে গুলি

নারী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি। একজন বিক্ষোভকারী পুলিশের বন্দুক নিয়ে টানাটানি করছেন। ইরানের গিলান প্রদেশের রাশত শহরের এই চিত্র গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওতে ছড়িয়ে পড়ে।
ছবি: এএফপি

মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর সরকার। গত বুধবার বিক্ষোভকারীদের দমাতে বিভিন্ন শহরে গুলি ছুড়েছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী। মানবাধিকার গ্রুপগুলো বলছে, বিক্ষোভে ইতিমধ্যে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিক্ষোভে গুলি চালানোর ভিডিও সামনে এনেছে। তাতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ‘স্বৈরাচারের মৃত্যু চেয়ে’ স্লোগান দিচ্ছেন। কিন্তু গুলি চালিয়ে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। ইরানের ইস্পাহান, কারাজ ও সাকেজ শহরে বিক্ষোভে গুলির ঘটনা ঘটেছে।

তেহরানের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নারী শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা স্বৈরাচারের মৃত্যু চেয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। এ সময় অনেকের মাথায় হিজাব দেখা যায়নি।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর হিজাবনীতি না মানায় মাসা আমিনি নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা যান। এরপর থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাতে সংহতি জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) ভিডিও টুইট করে বলেছে, দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে ইস্পাহানে গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। কুর্দি মানবাধিকার গ্রুপ হেনগাও বলেছে, সাকেজে নিরাপত্তা বাহিনী পালিয়ে গেছে।

মানবাধিবার গ্রুপগুলো অভিযোগ করেছে, কমপক্ষে ২৮ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক বিক্ষোভকারীকে আটক করে প্রাপ্তবয়স্কদের কারাগারে রেখে দেওয়া হয়েছে। কুর্দিস্তানের সানান্দাজ এলাকার পাশাপাশি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের জাহেদান এলাকাতেও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গত বুধবার আবার সড়কে দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য শত্রুদের দায়ী করেছেন। এর আগে তিনি এ দাঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছিলেন। খামেনি বলেন, ‘শত্রুরা অপকর্ম, বিশেষ করে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করতে চাইছে। তাদের উত্তেজনা বাড়িয়ে উত্সাহিত করা হচ্ছে। এমনকি অস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের সংবাদমাধ্যম আইএসএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী তেহরান, বিশেষ করে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় ও বিক্ষোভের জন্য লোকজন জড়ো হতে পারে এমন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

তেহরানের বিক্ষোভকারীরা সানান্দাজ ও জাহেদান এলাকার বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানাতে আহ্বান জানিয়েছেন। তেহরানের আজাদ ইউনিভার্সিটির সামনে একদল তরুণী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমরা কাউকে দর্শক হিসেবে দেখতে চাই না। আমাদের সঙ্গে যোগ দিন।’

‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ স্লোগানটি সাবেক মার্কিন দূতাবাসের দেয়ালে লিখে রাখতে দেখা গেছে। এদিকে ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে নাম প্রকাশ না করে এক ব্যক্তি বলেছেন, এখানকার পরিস্থিতি থমথমে মনে হলেও এখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মানুষ এবার আশাবাদী। কিছু পরিবর্তন হয়তো সামনে দেখা যাবে। মানুষ এবার সহজে বিক্ষোভ থেকে সরে দাঁড়াবে বলে মনে হয় না। সবখানেই কিছু না কিছু বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। প্রতি রাতেই বিক্ষোভ হচ্ছে। এটা ভালো মনে হচ্ছে।

এদিকে বিক্ষোভ দমাতে ইরান সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রেখেছে। সেখানে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ। বিক্ষোভ দমনে গণপ্রেপ্তার চলছে। ইরানে বিক্ষোভ-দাঙ্গার হোতাদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘বিক্ষোভের মূল হোতাদের’ কঠোর শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান। গতকাল তিনি বলেন, তিনি সব বিচারককে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ও প্ররোচণাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেইন মোহশেনি ইজেইয়ের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম আইএসএনএর প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়। গোলাম হোসেইন মোহশেনি ইজেই বলেন, ‘আমি বিচারকদের এই বিক্ষোভে কম দোষী ব্যক্তিদের আলাদা করার সময় মূল হোতাদের প্রতি অপ্রয়োজনীয় সহানুভূতি এড়িয়ে এবং তাদের কঠোর সাজা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

হিজাবনীতি ভঙ্গ করার অভিযোগে দেশটির নীতি পুলিশ মাসা আমিনি নামের এক তরুণীকে আটক করেছিল। পুলিশি হেফাজতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসার মৃত্যু হয়। মাসার পরিবারের দাবি, মাসাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় মামলাও করেছে। তবে পুলিশ বলছে, এই নারী তাদের হেফাজতে থাকলেও ‘হৃদ্‌যন্ত্র বিকল’ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভ ঠেকাতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান উরসুল ভন ডার লিয়েন বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে এখন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সময়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইরানের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন