দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। সামরিক আইন জারি ও তা প্রত্যাহার–সংক্রান্ত বিতর্ককে কেন্দ্র করে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃত দেশটির জন্য গত কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। সেনারা তখন পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকেও পড়ছিলেন। তবে আইনপ্রণেতারা তাঁদের সেই প্রচেষ্টা রুখে দেন। সামরিক আইন জারির কয়েক ঘণ্টা পর বিক্ষোভের মুখে তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ইউন। আজ বুধবার তাঁকে অভিশংসনের আহ্বান জানিয়েছেন আইনপ্রণেতারা।
পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর আইনপ্রণেতাদের একটি জোট বলেছে, ইউনকে অভিশংসনের জন্য প্রস্তাব দিয়ে তাঁরা আজ একটি বিল উত্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ বিল নিয়ে ভোটাভুটি করতে হবে।
বিরোধীদলীয় ওই জোটের এমপি (পার্লামেন্ট সদস্য) হোয়াং উন হা সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত একটি অভিশংসন বিল পাস করতে হলে অবিলম্বে প্রেসিডেন্টের কাজকর্ম স্থগিত করার দিকে পার্লামেন্টের মনোনিবেশ করতে হবে।
এর আগে গতকাল সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়ে ইউন বলেছিলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রের দেশ উত্তর কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী বাহিনীগুলো থেকে দেশকে এবং অবাধ সাংবিধানিক শৃঙ্খলাকে সুরক্ষিত রাখতে সামরিক আইন জরুরি।’ তবে তিনি তখন সুনির্দিষ্ট করে কোনো হুমকির কথা উল্লেখ করেননি।
ইউনের এ ঘোষণার পরপরই সিউলে পার্লামেন্ট ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পার্লামেন্টের বাইরে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁদের স্লোগান দিতে শোনা যায়। হেলমেট পরা সেনারা ভাঙা জানালা দিয়ে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়লে এবং আকাশে সেনা হেলিকপ্টারের টহল শুরু হলে পরিস্থিতি আরও বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। পার্লামেন্টের কাজে সহযোগিতার জন্য নিযুক্ত কর্মীরা সেনাদের পিছু হটাতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থেকে স্প্রে করেন। পার্লামেন্টের বাইরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী বলেছে, পার্লামেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে এবং সংবাদমাধ্যম ও প্রকাশকেরা সামরিক আইনের আওতায় থাকবে।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট সামরিক আইন প্রত্যাহার করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করে। এ সময় পার্লামেন্টের ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ইউনের দলের ১৮ জন সদস্য ছিলেন। প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা তখন হাততালি দিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমরা জিতে গেছি!’
দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর বৃহত্তম জোট কোরিয়ান কনফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়ন গতকাল বলেছে, ইউন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ট্রেড ইউনিয়নের হাজার হাজার সদস্য ধর্মঘট করবেন। গতকাল তাঁরা সিউলে একটি সমাবেশও করেছেন।
পার্লামেন্ট ভবনের কাছাকাছি আরও বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে গতকালও ইউনের সামরিক আইন জারির আদেশটি রুখে দেওয়া এবং তাঁর গ্রেপ্তার ও পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল।
২০২২ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ইউনের প্রতি পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, পদত্যাগ না করলে ইউনকে অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আইনপ্রণেতার ভোট প্রয়োজন হবে। এরপর সাংবিধানিক আদালতে বিচার-বিবেচনার কাজ হবে। সাংবিধানিক আদালতের ৯ জন বিচারপতির ৬ জন যদি অভিশংসনের পক্ষে সমর্থন দেন, তবে তা কার্যকর হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩০০ সদস্যের পার্লামেন্টে ইউনের দলের নিয়ন্ত্রণে আছে ১০৮টি আসন।
ইউন যদি পদত্যাগ করেন বা ক্ষমতাচ্যুত হন, তবে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সু এ দায়িত্ব পালন করবেন।